জঙ্গিবাদের উত্থান নিয়ে ব্লেমগেম
এম কবির : জঙ্গিবাদের উত্থান নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অপরকে দোষারোপ করে আসছে দীর্ঘদিন। আওয়ামী লীগ বলছে জঙ্গিবাদের উত্থানের জন্য বিএনপি দায়ী। বিএনপি বলছে, জঙ্গিবাদের বিস্তার আওয়ামী লীগের আমল থেকে সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ক্ষমতায় এসে বিএনপিই দেশে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছিল। গত ১৫ জুন সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। গণভবনে ছাত্রলীগের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান সরকার সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে কোনো অবস্থাতেই প্রশ্রয় দেবে না।
জঙ্গিবাদ দমনে জনগণের সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে তাগিদ দেন এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার। আর বিরোধীদের পরামর্শ দেন বিদেশিদের কাছে নালিশ করার ব্যাপারে আরও সংযত হবার।
২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর কুড়িগ্রামের একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বিএনপি-জামায়াত জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছিল, সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। এখনও সেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ করে এবং এদের হাত থেকে কেউ রেহাই পায় না। তবে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের কঠোর অবস্থান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জঙ্গিবাদ দমনে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছি। কোনোভাবেই জঙ্গিবাদের উত্থান আমরা হতে দেব না।
সরকারি দলের এধরনের অভিযোগের জবাবে বিএনপির পাল্টা বক্তব্য হচ্ছে, আওয়ামী লীগ জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছে, বিএনপি এসে জঙ্গিবাদ দমন করেছে। আওয়ামী লীগ আমলেই উদীচীর সম্মেলনে বোমা হামলা করা হয়েছে আর বিএনপি বাংলাভাই, শায়খ আব্দুর রহমানকে ধরে ফাঁসি দিয়েছে। কাজেই আওয়ামী লীগ আমলে জঙ্গিবাদ বাড়ছে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে পুরোপুরি জঙ্গিবাদ দমন করবে বলেও মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া। ২০১৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর খুলনা সার্কিট হাউস মাঠের জনসভায় দেওয়া প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বাংলাদেশে ‘জঙ্গিবাদের উত্থানের’ জন্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করে আসছেন দীর্ঘদিন থেকেই। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনাই জঙ্গি জঙ্গি বলেছেন। বিদেশিদের ভয় দেখানোর জন্যে। বিদেশিদের তারা বোঝাতে চাইছে বিএনপি এলে জঙ্গিদের উত্থান হবে। কিন্তু তাদের উত্থান আওয়ামী লীগের আমলে হয়েছে। আমরা ক্ষমতায় আসার পর সব জঙ্গিকে ধরেছি। ২০১৫ সালের ২ নভেম্বর লন্ডনের একটি হোটেলে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে জুন ১০ শুক্রবার রাজধানীর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত জিয়াউর রহমান এবং মোহাম্মদ আলী স্মরণে এক সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, দেশে সহিংসতা ও উগ্রবাদ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। সরকার বিএনপিকে দোষারোপ করেই ব্যর্থতা ঢাকছে। এতগুলো হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সরকার কোনো সুরাহা করতে পারেনি। গণতন্ত্র না থাকায় জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটছে। জঙ্গিবাদ উত্থান প্রসঙ্গে মওদুদ আরও বলেন, ব্লেমগেম বন্ধ করুন। এটি একটি জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা বন্ধ করতে হবে। আমরা জঙ্গিবাদকে ঘৃণা করি। গণতন্ত্র না থাকায় উগ্রপন্থিরা এটাকে সুযোগ হিসেবে নিচ্ছে। সত্যিকারের গবেষণা করেন। দেশে বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের কোনো স্বাধীনতা নেই।
খালেদা জিয়া জঙ্গিদের পক্ষে বলেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। ‘এখন খালেদা জিয়া গুপ্তহত্যার বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য না দিয়ে জঙ্গিদের পক্ষে কথা বলছে। খুনিদের রক্ষার জন্য চেষ্টা করছে। বর্তমানে গুপ্তহত্যার ঘটনা বিএনপি-জামায়াতের পূর্বনাশকতার ধারাবাহিকতা।’ ২০ জুন সোমবার সন্ধ্যায় পল্টনে মনিসিং-ফরহাদ ট্রাস্ট ভবন মিলনায়তনে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেন স্মরণে এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের জনক হচ্ছে আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতার পর দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার পরিবর্তে এই আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছিল। জেএমবির মতো জঙ্গি সংগঠনও আওয়ামী লীগ নেতার আত্মীয়ের নেতৃত্বে তাদের সময় সৃষ্টি হয়েছে। আজকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের হোতারা নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর রোববার দুপুরে যুবদল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি ‘সন্ত্রাসী সংগঠনে’ পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল ইসলাম বলেছেন, ছাত্রদল-শিবির সারাদেশে জঙ্গি তৎপরতা চালাতে তৎপর রয়েছে। ১১ জুন শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
জঙ্গিবিরোধী ‘সাঁড়াশি অভিযানের’ নামে সরকারবিরোধীদের ‘দমনের’ যে অভিযোগ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর করেছেন- তাও নাকচ করে দেন তিনি।
বিএনপি বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে অভিযোগ করে কামরুল ইসলাম বলেন, যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের অতীত ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, তারা জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আপনারা তাদের সঙ্গে কাজ করছেন।
বিএনপি এদেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম । তিনি বলেন, বিএনপি মনে করেছিল যে এতেই মনে হয় হবে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে চরমভাবে। জনগণ তাদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। গত ২ জানুয়ারি একটি অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।