আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ৫
আকাশবীণা উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বদনাম যেন না হয়, আমাদের দেশের যেন সুনাম হয়
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: নতুন বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ ‘আকাশবীণা’ উদ্বোধন করে জাতীয় বিমান পরিবহন সংস্থার কর্মীদের আন্তরিক হতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী বিমানকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমি চাই, বিমানের সাথে যারা কর্মরত, প্রত্যেকে আন্তরিকতার সাথে কাজ করবেন। যেন কোনো বদনাম না হয়। আমাদের দেশের যেন সুনাম হয়। কারণ, যখন কোনো বিদেশি আসে বা যায় বা দেশে যারা আসেন প্রবাস থেকে, তাদের যেন দ্রুত মাল খালাস হওয়া, দ্রুত তারা যেন চলে যেতে পারেন।
বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত উড়োজাহাজ ‘আকাশবীণা’ নিয়ে বিমানের বহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫টি। শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিভিআইপি লাউঞ্জে এই অনুষ্ঠানে ড্রিমলাইনারের ‘আকাশবীণা’ নামকরণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই নতুন বিমান এসেছে, চেষ্টা করেছি তারই একটা নতুন নাম দিতে। ছয়টি বিমান আসার পর প্রথম ড্রিমলাইনারটি গত মাসে এসেছে। বাকি তিনটির একটি নভেম্বরে এবং অবশিষ্ট দুটি আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে আসবে। নভেম্বরে যে ড্রিমলাইনারটি আসছে প্রধানমন্ত্রী সেটির নামও ঠিক করেছেন বলে জানান। ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ ‘আকাশবীণা’র উদ্বোধন উপলক্ষে কেক কাটেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নতুন বিমান সংযোজন করছি; বিমান যেন ভালোভাবে চলতে পারে। যোগোযোগ একটি দেশের জন্য অতন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের আকাশপথ, রেলপথ, সড়কপথ সবগুলো যোগোযোগ ব্যবস্থা যেন উন্নত হয় সেজন্য আমরা বিশেষভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
ড্রিমলাইনার চালানোর জন্য সিঙ্গাপুর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বিমানের ১৪ জন বৈমানিক। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে প্রকৌশল বিভাগের ১১২ জনকে। এছাড়া কেবিন ক্রুদেরও দেওয়া হয়েছে বিশেষ প্রশিক্ষণ।
আকাশবীণায় আসন সংখ্যা ২৭১টি। এর মধ্যে বিজনেস ক্লাস ২৪টি, ২৪৭টি ইকোনমি ক্লাস। দুই পাশের প্রত্যেক আসনের পাশে রয়েছে বড় আকারের জানালা। একইসঙ্গে জানালার বোতাম টিপে আলো নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। ড্রিমলাইনারের বিজনেস ক্লাসের আসগুলো ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত সম্পূর্ণ ফ্ল্যাটবেড হওয়ায় যাত্রীরা আরমদায়ক ভ্রমণ করতে পারবেন। উড়োজাহাজটির প্রতিটি আসনের সামনে প্যানাসনিকের এলইডি এস-মনিটর রয়েছে। মনিটরে বিবিসি, সিএনএনসহ নয়টি টিভি চ্যানেল দেখা যাবে। একইসঙ্গে ইন-ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেমে (আইএফই) থাকবে ১০০টির বেশি চলচ্চিত্র। ড্রিমলাইনার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ হাজার ফুট ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময়ও ওয়াইফাই সুবিধা পাবেন যাত্রীরা। এছাড়া মোবাইল ফোনে রোমিং সুবিধা থাকলে আকাশে উড্ডয়নের সময় কল করতে পারবেন যাত্রীরা। এজন্য ২৫টি স্যাটেলাইটের সঙ্গে করা হয়েছে চুক্তি। এই ড্রিমলাইনারের তৈরি করেছে জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই)। বিমানের শব্দ কমাতে ইঞ্জিনের সঙ্গে শেভরন যুক্ত রয়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণ নিয়ন্ত্রণ হবে ইলেক্ট্রিক ফ্লাইট সিস্টেমে। ভূমি থেকে ৫৬ ফুট উচ্চতার উড়োজাহাজটি কম্পোজিট ম্যাটেরিয়ালে তৈরি ওজনে হালকা। এর মাধ্যমে চোখের সামনের প্রয়োজনীয় তথ্য দেখতে পারবেন বৈমানিকরা। সার্বক্ষণিক ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঢাকায় ফ্লাইট অপারেশন রুমের সঙ্গে যুক্ত থাকবে এটি।
চারটি ৭৮৭ ড্রিমলাইনারসহ ১০টি উড়োজাহাজ কিনতে ২০০৮ সালে মার্কিন বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের সঙ্গে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে বিমান বাংলাদেশ। এরমধ্যে, বোয়িং-৭৭৭ এর নাম পালকি, অরুণ আলো, আকাশপ্রদীপ, রাঙা প্রভাত, মেঘদূত এবং বোয়িং-৭৩৭ এর নাম ‘ময়ূরপক্সখী’ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান খান ও মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহীবুল হক, বিমান বোর্ডের চেয়ারম্যান ইনামুল বারী এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম মোসাদ্দিক আহমেদ বক্তব্য রাখেন। ইনামুল বারী প্রধানমন্ত্রীকে ড্রিমলাইনারের একটি রেপ্লিকা উপহার দেন।