কিছুই রইলো না রহিমা বেগমের!
শরীয়তপুর প্রতিনিধি: ২০ বছর হলো স্বামীকে হারিয়েছেন রহিমা বেগম (৯৫)। ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনি নিয়ে চার শতাংশ জমির মধ্যে বসবাস ছিল তার। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অব্যাহত ভাঙনে তার সেই জমিটুকুও পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। স্বামীর ভিটে হারিয়ে পদ্মা পানে চেয়ে থাকা ছাড়া যেন আর কিছুই করার নেই তার। রহিমা বেগম নড়িয়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের মৃত আব্দুর রশিদ মাঝির স্ত্রী। একইভাবে কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও মূলফৎগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী ইমাম হোসেন দেওয়ান ছিলেন একজন কোটিপতি। সম্প্রতি ভাঙনে তার বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সব হারিয়ে এখন তিনি নিঃস্ব। এমনকি তার থাকার জায়গাটুকুও নেই। আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়র বাড়িতে।
রহিমা বেগম ও ইমাম হোসেন দেওয়ানের মতো অবস্থা এখন নড়িয়ার হাজারো পরিবারের। গত তিন মাসে নদী ভাঙনে ৫ হাজার ৮২টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এখনও অব্যাহত ভাঙনে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। নড়িয়া এলাকার বাঁশতলা ও কেদারপুরে এক সপ্তাহ বিরতির পর ফের নতুন করে ভাঙতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ১শ বসতঘর সরিয়ে নিয়েছেন ভাঙন কবলিতরা।
এ এলাকায় গত দুদিনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ৫টি ভবন। এতে দিশেহারা ভাঙন কবলিতরা।
জানা যায়, নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে�ক্সের নতুন ভবনটির অধিকাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। হাসপাতাল ক্যাম্পাসের একটি আবাসিক ভবনে জরুরি বিভাগ, আন্তঃবিভাগ ও বহিঃবিভাগ চালু রাখা হয়েছে। রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। এমনকি হাসপাতালে প্রবেশের সড়কটি বিলীন হয়ে যাওয়ায় ভয়ে আগের মতো রোগীও আসছে না। হাসপাতালের সামনেই পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলছে। তবে সেটা কোনো কাজে আসছে না। গত তিন বছর ধরে নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর, মোক্তারের চর ইউনিয়ন ও নড়িয়া পৌরসভা এলাকায় পদ্মায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। কিন্তু শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো মাথা ব্যথা নেই বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
এ বিষয়ে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান বলেন, নদীর পানি না কমা পর্যন্ত তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব না। এ মুহূর্তে ভাঙন রোধ সম্ভব না হলেও বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে তীব্রতা কমানোর চেষ্টা চলছে। জিও ব্যাগ ফেলায় কিছুটা হলেও ভাঙন রোধ হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, ভাঙন কবলিতদের আশ্রয়ের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুুত করা হচ্ছে। ভাঙন কবলিত সব পরিবারকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে চাল ও শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। এছাড়াও পুনর্বাসন সহায়তা হিসেবে টিন ও নগদ টাকা দেয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার।