জিহাদি নেতাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে ড্রোন ১৬ বছরে অর্ধশতাধিক শীর্ষ আইএস নেতা নিহত
আমিনুর রহমান তাজ : গত ১৬ বছরে (১৯৯০-২০১৬) কথিত খিলাফত প্রতিষ্ঠার যুদ্ধে ইসলামি স্টেটসের (আইএস) ৫১ শীর্ষ নেতা বিমানহামলায় মারা গেছেন। নিহতদের মধ্যে আইএসের প্রতিষ্ঠাতা আবু মুসাব আল জারকাওয়িও রয়েছেন। ২০০৬ সালের ৭ জুন মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন বাহিনীর বিমানহামলায় তিনি মারা যান।
জারকাওয়ি ছাড়া বাকি নিহতদের বেশিরভাগই সামরিক কমান্ডার বা সমর বিশেষজ্ঞ। এছাড়া আইএসশাসিত অঞ্চলের গভর্নর, নেতা, মজলিসে শুরার সদস্যরাও রয়েছেন নিহতদের তালিকায়। সিরিয়া অঞ্চলের অন্যতম সামরিক কমান্ডার আবু ওমর আল সিশানি, লিবিয়ার সামরিক নেতা আবু নাবিল আল আনবারি, আবু হাইজা আল টুনসি, আওলাকি, আইএসের কসাই খ্যাত এমওয়াজি ওরফে জিহাদিজনের মতো নেতারা মারা গেছেন মার্কিন বিমানহামলায়।
এর বাইরে আনুমানিক আরও ২০ শীর্ষ আইএস নেতা জীবিত থেকে বিশ্বজুড়ে কথিত খিলাফতের জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। এদের নেতৃত্বে রয়েছেন দলীয় প্রধান আবু বকর আল বাগদাদী। ২০১১ সালের ৪ অক্টোবর বাগদাদীকে জীবিত অথবা মৃত ধরিয়ে দেওয়ার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ৫০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে।
পাশ্চাত্যের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, শীর্ষ নেতারা একের পর এক চালকবিহীন বিমানহামলায় নিহত হলেও বিশ্বজুড়ে জঙ্গি তৎপরতায় ভাটা পড়েনি।
সর্বশেষ গত আগস্ট মাসে রাশিয়ার বিমানহামলায় মারা যান দলটির মুখপাত্র আল-আদনানি। তার মৃত্যু ছিল সংগঠনটির জন্য এক বড় ধরনের ধাক্কা। বিশ্বজুড়ে ‘লোন উলফ অ্যাটাকের’ নেপথ্য নায়ক ছিলেন আদনানি। মূলত তার নির্দেশের পর ‘লোন উলফ অ্যাটাকের’ ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে।
বিশ্লেষকদের মতে ইরাকের মসুল এবং সিরিয়ার রাকা ও আলেপ্পো শহর হাতছাড়া হওয়ার পর যুদ্ধে কিছুটা স্ট্র্যাটেজি পরিবর্তন করে আইএস। বিশেষ করে, তারা সিরিয়া ও ইরাকে কেন্দ্রীভূত না থেকে সারাবিশ্বে জঙ্গিবাদের আগুন ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রোপাগান্ডা শুরু করে। এক্ষেত্রে তারা ‘লোন উলফ অ্যাটাক’ পদ্ধতিতে ও ‘সিøপার সেল’ খুলে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে হামলা পরিচালনা করতে উদ্যোগী হয়। এ ব্যাপারে আল আদনানি বিশ্বের বিভিন্ন তোরা দলের সমর্থককে অনুপ্রাণিত করে তোলেন। তিনি ছিলেন বৈদেশিক হামলা বিভাগের প্রধান।
দলটিতে বর্তমানে প্রথম সারির ২০ শীর্ষ জিহাদি নেতার সন্ধানে প্রতিনিয়তই খোঁজ চালাচ্ছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন বাহিনী।
২০১৪ সালের ২৯ জুন আইএস বিশ্বজুড়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জঙ্গিবাদের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বেলজিয়াম, ফ্রান্স, তুরস্ক ও সৌদি আরব জঙ্গিহামলার শিকার হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কাউন্টার টেরোরিজম দফতরের সাবেক সমন্বয়ক ড্যানিয়েল বেঞ্জামিন বলেছেন, সিরিয়া ও ইরাকের দখল হারালেও আইএস ইউরোপসহ পশ্চিমা বিশ্বের দিকে নজর দেবে যা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়ালিয়শন বাহিনীর ড্রোনহামলার ঘটনাটিকে আইএস নেতারা সন্দেহের চোখে দেখে। আইএস নেতারা মনে করেন, ইন্টারনেটের মাধ্যমে খবর অবগত হওয়ার পরই মার্কিন চালকবিহীন বিমানগুলো টার্গেট লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এক্ষেত্রে দলের ভেতরে গুপ্তচরবৃত্তির বিষয়টি আমলে নেয় আইএস নেতারা। গত মার্চ মাসে আইএস নেতা তিউনিশিয়ান আবু হাইজা আল টুনসি মার্কিন ড্রোনহামলায় মারা যান। এ ঘটনায় আইএস জঙ্গিরা তাদের দলের ৩৮ জঙ্গিকে গুলি করে হত্যা করে। নিহতরা জঙ্গি নেতা টুনসির অবস্থানের তথ্য মার্কিনিদের সরবরাহ করেছিল এ সন্দেহে তাদের হত্যা করা হয়। সম্পাদনা: পরাগ মাঝি