জঙ্গিগোষ্ঠীর নতুন কৌশল ‘একাকী নেকড়ে’ তৈরি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আন্তর্জাতিক গোষ্ঠির চাপে বিশ্বের চরমপন্থি দলগুলো ক্রমবর্ধমানহারে ‘একাকী নেকড়ে’ বা জঙ্গি হামলায় স্বতন্ত্রভাবে কোনো ব্যক্তিকে ব্যবহারে জোড়ালো তৎপরতা শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন সন্ত্রাস বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং গবেষক মাহের আল-বার্দি। চ্যানেলআই
‘একাকী নেকড়ে’ তৈরির পূর্ববর্তী ধাপে তরুণ প্রজন্মকে ব্রেনওয়াশ বা তাদের চিন্তাধারায় চরমপন্থার বীজ বুনে দেওয়ার বিষয়টির ওপর জোর দিতে শুরু করেছে গ্রুপগুলো। আরব নিউজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ধরণের অপতৎপরতা চলছে বলে দাবি করা হয়েছে।
আল-বার্দি বলেন, ‘উগ্রবাদী গ্রুপগুলো তাদের এমন লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য বিশ্বের অনেক দেশে এক বা দুই সদস্য বিশিষ্ট ছোট ছোট বেশ কয়েকটি বিক্ষিপ্ত সেল গঠন করার পদ্ধতি অবলম্বন করছে বলে আমরা দেখতে পেয়েছি।’
ধর্মীয় অনুভূতির আবেদন সৃষ্টি, আবেগিক চাল ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নিজেদের বাস্তব অবস্থা, শক্তিমত্তা এবং ‘বীরোচিত ভূমিকার’ বর্ণনা দিয়ে তরুণ-তরুণীদের অন্তর্ভূক্ত করতে উৎসাহ দিচ্ছে গোষ্ঠিগুলো।
প্রতিবেদনে আল-বার্দি উল্লেখ করেন, ‘মনোজাগতিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থানের জন্য অনেক তরুণদের মধ্যেই নেতিবাচক প্রবণতা রয়েছে, যা তাদের পরিবার, সমাজ এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
এই সকল বিষয়গুলো তাদের আক্রমণাত্মক করে তোলে; যা সমাজের বিপরীতে পরিচালিত হয়।
‘যে তরুণদের মধ্যে কোন সময়েও বর্বরতার প্রতি আকর্ষণ ছিলো এবং সেই প্রবণতা ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত, বিশ্বের যেকোন দেশেই তাদের একাকী নেকড়ে হিসেবে নিয়োগ দেওয়া সহজতর বলে প্রতীয়মান। জঙ্গিদলগুলোর আদেশ প্রতিপালনে তৈরি থাকে তারা।’ সৌদি আরব ও কুয়েতের কয়েকটি মসজিদে বোমা হামলা, এমনকি ব্রাসেলস, প্যারিস ও আমেরিকাসহ পুলিশ বা তাদের আত্মীয়-স্বজনের উপর প্রাণঘাতি হামলাগুলো যেকোন দেশে সম্ভাব্য অধিক সংখ্যক একাকী নেকড়ে তৈরিতে জঙ্গি দলগুলোর সক্ষমতার নজির। সময়, শ্রম এবং অর্থ বাঁচিয়ে দূর থেকেই এই গ্রুপগুলো তাদের এজেন্ডা ও লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম।
আল-বার্দি বলেন, ‘আমরা আরও দেখতে পেয়েছি যে ভ্রমণ ও অতিরিক্ত ঝুঁকি গ্রহণ ছাড়া এই একাকী নেকড়েরা তাদের দেশেই তাদের কাজ পালাক্রমে সফলভাবে সম্পাদন করছে। এমনকি চরমপন্থি দলগুলো এদের জন্য ফতোয়াও জারি করেছে যে, বিশ্বজুড়ে বিশৃঙ্খলা এবং সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিতে শুধুমাত্র নেতার প্রতি আনুগত্য জানিয়ে তারা যেকোন জায়গাতেই যুদ্ধচালাক এবং প্রমাণ করুক তারা কতটা শক্তিশালী এবং যেনো তারা ইচ্ছামতো যেকোন জায়গাতেই পৌছে যেতে পারে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, এইসব একাকী নেকড়েদের থামাতে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা ও নিরাপত্তা সহযোগিতার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ। সামাজিক মাধ্যমগুলোও নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনতে হবে।
বিশেষত সন্দেহভাজন এ্যাকাউন্টগুলো এবং এর সূত্রগুলো অনুসরণের একটি ব্যবস্থা গ্রহণও করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহারের জন্য সন্তানদের একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া এবং সন্তানদের এ্যাকাউন্টগুলো যেনো পরিবারের পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষণ করা হয়, এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার উপর জোর দেন তিনি। এই জঙ্গি দলগুলোর পন্থা এবং ব্যবহৃত পদ্ধতি সম্পর্কে পরিচিত হতে পরিবারগুলোকে বিভিন্ন সেমিনার বা আলোচনায় অংশ নেয়ার গুরুত্বও তুলে ধরেন আল-বার্দি।