১০ বছরে খেলাপি ঋণ সাড়ে ২২ হাজার কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৯ হাজার কোটি টাকা
রমজান আলী : সরকারের টানা দুই মেয়াদের শাসনামলে গত ১০ বছরে আগের ১০ বছরের তুলনায় খেণাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে চার গুণ। মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় ২০০৯ সালে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা।
এর বাইরে দীর্ঘদিন আদায় করতে না পারা যেসব ঋণ ব্যাংকগুলো অবলোপন করেছে, তার পরিমাণ প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের সঙ্গে অবলোপন করা এ মন্দ ঋণ যুক্ত করলে প্রকৃত খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা।
তবে ব্যাংক খাতে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রকৃত খেলাপি ঋণ আরও অনেক বেশি। অনেকগুলো ব্যাংক বড় অঙ্কের ঋণ আদায় করতে পারছে না, আবার তা খেলাপি হিসেবেও চিহ্নিত করছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকও এতে নজর দিচ্ছে না। এ ছাড়া শেয়ারবাজারের অজুহাতে প্রতিবছরই ব্যাংকগুলো নানা ছাড় নিচ্ছে। এতে করে খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্যও বেরিয়ে আসছে না। পাওয়া যাচ্ছে না ব্যাংকগুলোর স্বাস্থ্যের প্রকৃত চিত্র।
এব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যদি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ আদায় করার জন্য চাপ সৃষ্টি করতো তাহলেই অনেকটাই খেলাপি কমে যেতো। যে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ আদায় ব্যর্থ হবে, সেই ব্যাংকগুলোর শাখা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দিতো বাংলাদেশ ব্যাংক, তাহলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে যেতো। বাংলাদেশ ব্যাংক কোন শাস্তির ব্যবস্থা করছে না ফলে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ নিয়ে তেমন কোন মাথাব্যথা নেই। এছাড়া ব্যাংকগুলো ঘুরে ফিরে খেলাপি ঋণ ব্যক্তিকেই ঋণ দিচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রতি প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ একটু বাড়ে। এবারও বেড়েছে। ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ আদায়ে নিয়মিত তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। ডিসেম্বর শেষে তা কমে আসবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের ঋণ বেড়ে হয়েছে ৮ লাখ ৬৮ হাজার ৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ৩০ কোটি টাকা। ২০১৭ সাল শেষ থেকে ধরলে ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৫ হাজার ৬৭ কোটি টাকা।
তথ্যমতে, সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ৮০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩১ দশমিক ২৩ শতাংশ। ক্রিসেন্ট ও অ্যাননটেক্স গ্রুপের কারণেই জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল ৪৩ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশই খেলাপি। গত জুন শেষে যা ছিল ৬ শতাংশ। সেপ্টেম্বর শেষে বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের (কৃষি ও রাজশাহী কৃষি) খেলাপি ঋণের হার বেড়ে হয়েছে ২১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। আর বিদেশি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার প্রায় ৭ শতাংশ। সম্পাদনা : ইকবাল খান