‘ওবামার চেয়ে পুতিন ভালো’ তবে কি রাশিয়ার হাত ধরেই ক্ষমতা চান ট্রাম্প?
ডেস্ক রিপোর্ট : কদিন আগে ডেমোক্র্যাট শিবিরে রুশ হ্যাকারের হামলা, তারও আগে রিপাবলিকান ট্রাম্পের এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীর মস্কো সফর, আর এবার ট্রাম্প নিজেই বলে ফেললেন, ওবামার চেয়ে পুতিন ভালো। তবে কি এবার মার্কিন নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের হাতের সবচেয়ে শক্তিশালী ‘ট্রাম্প কার্ড’ হতে চলেছে রাশিয়া? জানাচ্ছেন অনির্বাণ বড়–য়া। পুতিনকে বারাক ওবামার চেয়ে ভালো রাষ্ট্রনেতা বলে অভিহিত করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন সমালোচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ট্রাম্পের উপর ইতোপূর্বে নিজ দলের নেতারাই বিরক্ত থাকলেও এ বিষয়টিতে দলটির শীর্ষ পর্যায়ে তেমন কোনো সমালোচনা নেই। বরং কেউ কেউ ট্রাম্পের এ বক্তব্যকেই পুনঃরায় আওড়াচ্ছেন। এক ধাপ এগিয়ে ইন্ডিয়ানার সিনেটর মাইক পেন্সি তো পুতিনকে ‘অবিসংবাদিত’ভাবে ওবামার চেয়ে ভালো প্রেসিডেন্ট বলেছেন। তাই অনেকে ভাবছেন নভেম্বরে যদি ট্রাম্প বিজয়ী হন তবে তা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী একটি ঐক্যের জন্ম দিতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস
এদিকে ডেমোক্রেটিক দলের তরফ থেকে রিপাবলিকান এ প্রার্থীকে দেশদ্রোহীও আখ্যা দেওয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটন এ ধরনের মন্তব্যকে অদেশপ্রেমীসুলভ বলেছেন। তিনি বলেন, ‘এটা শুধু অদেশপ্রেমীসুলভই নয় বরং এটা আমাদের দেশের নির্বাহী প্রধান ও সাধারণ মানুষের প্রতি তিরস্কারÑ এটা ভয়ানক।’
হিলারি ট্রাম্পকে যাই বলুক, রাশিয়াও তাদের ভাবি মিত্রকে বেশ সহায়তা করছে বলে খবর প্রকাশ হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলোয়। ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার সরকারের পুষ্ট হ্যাকাররা ডেমোক্রেটিকদের সার্ভার হ্যাক করে তারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর কী কী গবেষণা করেছেন সব ফাইল হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তারা সেই সার্ভার প্রায় সপ্তাহ পর্যন্ত কব্জায় রাখে।
যদিও ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বিষয়টি একেবারেই উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, এ কাজে সরকার বা সরকারের কোনো ব্যক্তির জড়িত থাকার সম্ভাবনাকেও আমি উড়িয়ে দিচ্ছি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প একবার প্রকাশ্য সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ান হ্যাকারদের প্রচ্ছন্ন আহ্বান জানান, হিলারির সব ই-মেইল যেগুলো ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) প্রকাশ করতে পারেনি সেগুলো হ্যাক করতে।
হিলারিও ট্রাম্পকে একেবারে ছেড়ে কথা বলছেন না, প্রচারণায় হিলারি ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্যকেই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন। হিলারি বলেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হলে সে পুতিনকে যা ইচ্ছা তা’ই করতে দেবে।
অপরদিকে রাশিয়ায় মুসলিমবিদ্বেষী মন্তব্যের জন্য বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাশিয়ার সাধারণ মানুষ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভøাদিমির ঝিনিনভস্কির সঙ্গে তুলনা করছেন। যিনি একজন উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ। তাকে অনেকে ‘রাজসভার ভাঁড়’ নামেও ডাকতেন। তার সঙ্গে তুলনার একটিই কারণ তিনিও রাশিয়ায় মুসলিমদের জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য জন্মের ওপর কর আরোপের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
রাশিয়া ও ট্রাম্পের বন্ধুত্ব একেবারে অন্য মাত্রা পায় যখন রাশিয়া ট্রাম্পের উপদেষ্টা কার্টার পেজকে নিউ ইকোনোমিক স্কুলের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ করে। কার্টারও একেবারেই নিরাশ করেননি। সেখানে বক্তব্যে তিনি মার্কিন রাষ্ট্র পরিচালনার প্রক্রিয়াকে ভ-ামি, অসাম্য, দুর্নীতিগ্রস্ত বলে উল্লেখ করেন। সেখানে এক ছাত্রের প্রশ্নের জবাবে পেজ মার্কিন উদারপন্থাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেন। তিনি এও বলেন, আমি তোমাদের সঙ্গেই আছি। তিনি বলেন, ‘আমি তোমাদের সঙ্গে একমত, এটা যতটা উদার দেখানো হয় মাঝে মাঝে ততটা উদার নয়’।
এদিকে আলোচনা সমালোচনায় ডোনাল্ড ট্রাম্প মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চিরবৈরী রাশিয়ার প্রশংসা এর আগে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মুখে শোনা যায়নি। বরাবরই ট্রাম্প বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচনায় থেকেছেন। সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ ও ফয়সল