ভারতের কাছ থেকে আরও ২০০ কোটি ডলার ঋণ নিচ্ছে সরকার
মাছুম বিল্লাহ : আগের ভারতীয় ৩০০ কোটি ডলার ঋণের প্রকল্পগুলো আটকে আছে। ভারতের বিভিন্ন শর্তের জালে অর্ধেক প্রকল্পেই স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এরপরেও আরও ২০০ কোটি ডলার ঋণ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যা দিয়ে নতুন ১৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
পুরনো ঋণের প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি ও নতুন ঋণের প্রস্তাব পর্যালোচনা করতে গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে বৈঠকে বসে বাংলাদেশ ও ভারত। বৈঠকে নতুন ১৪টি প্রকল্পের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৮টির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়।
এতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) যুগ্ম সচিব (এশিয়া) জাহাঙ্গীর আলম। ভারতীয় প্রতিনিধি দলের পক্ষে ছিলেন দেশটির যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন অংশীদারিত্ব) অজিত বিনায়েক গুপ্তা। আগের ঋণের সবচেয়ে বড় শর্ত হচ্ছে- ভারতের ৬৫ শতাংশ পণ্য ও সেবা গ্রহণ করা, যা অধিকাংশ প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় অন্তরায়। এরমধ্যে অধিকাংশ প্রকল্পই রেলপথ মন্ত্রণালয়ের। আর এগুলো বাস্তবায়নের গতিই সবচেয়ে করুণ।
এ প্রসঙ্গে রেল সচিব ফিরোজ সালাহ উদ্দিন গত মঙ্গলবার বলেন, নানা জটিলতায় প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন দেরি হয়েছে। আমাদের দিক থেকে সব প্রক্রিয়া শেষ করলেও কোনো কোনো প্রকল্পে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক থেকে ক্লিয়ারেন্স পেতে দেরি হয়েছে। তাছাড়া লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) প্রকল্পগুলোতে প্রক্রিয়াগত নানা জটিলতা ছিল। এগুলো সময়সাপেক্ষ হওয়ায় এতদিন দেরি হয়েছে। আশা করছি আগামী অর্থবছর থেকে পুরোপুরি প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন শুরু হবে।
সূত্র জানায়, প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় সমস্যা হচ্ছে মালামাল সংগ্রহের জন্য এলওসির ক্ষেত্রে ভারতের ৬৫ শতাংশ পণ্য ও সেবা গ্রহণ করার বাধ্যবাধকতা। এতেই ঘটছে বিপত্তি। প্রকল্পে ভারতে নিযুক্ত দুই ঠিকাদারই এখন বলছেন- বালু, মাটি ও সিমেন্টের মতো উপকরণ ভারত থেকে কেনা যৌক্তিক নয়। আর কিনতে গেলেও ব্যয় অনেক বেশি পড়ে। তাই প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় অংশের (বাংলাদেশ) বরাদ্দ বাড়ানোর বিকল্প নেই। ইতিমধ্যেই বিষয়টি ভারতীয় দূতাবাস ও এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়াকে জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে ভারত প্রথম দফায় ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেয় বাংলাদেশকে। তৎকালীন ভারতীয় অর্থমন্ত্রী বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ওই ঋণের ২০ কোটি ডলার পরে অনুদান হিসেবে ঘোষণা করেন। এ ঋণের আওতায় ১৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এসব প্রকল্পের ৬৫ শতাংশের বেশি পণ্য ও সেবা ভারত থেকে নেওয়ার শর্ত রয়েছে। ঋণের সুদ ধরা হয়েছে ২ শতাংশ। গত বছর জুনে ঢাকা সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আরও ২০০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দেন।
ইআরডি এশিয়া উইংয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দুটি কারণে ভারতীয় ঋণের প্রকল্পে খারাপ অবস্থা। প্রথমত, ঋণের চুক্তি হওয়ার পর প্রকল্পগুলো চিহ্নিত করা হয়। এ কারণে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করে অনুমোদন নিতে দেরি হয়ে যায়। আবার ভারতীয় পণ্য ও সেবা ৬৫ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত আমদানির শর্ত রয়েছে। ফলে এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ