স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে মাংস ব্যবসায়ীরা রাজধানীতে আধুনিক জবাইখানার সংকট
ফয়সাল খান: আসন্ন কুরবানির ঈদে নগরবাসীকে নির্ধারিত স্থানে পশু জবাই করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। নির্ধারিত স্থানে ইমাম কসাইসহ নানা আয়োজনের পরেও এসব জায়গায় কুরবানি দিতে অনীহা নাগরিকদের। পশু জবাইয়ের ৭০০ স্থান নির্ধারণ করে দিলেও পুরো ঢাকা শহরে জবাইখানা রয়েছে মাত্র ৩টি। যার মধ্যে দুটির অবস্থা নাজেহাল। দুই সিটি কর্পোরেশনের তথ্য অনুযায়ী আরও ১৭টি জবাইখানা নির্মাণ করার প্রক্রিয়া চলছে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মিরপুর এলাকায় ১টি আধুনিক জবাইখানা এবং হাজারীবাগ ও কাপ্তান বাজারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ২টি জবাইখানা রয়েছে। ডিএনসিসি সূত্র জানায়, গতবছর মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের নিউ সোসাইটি মার্কেটে একটি আধুনিক জবাইখানা নির্মাণ করা হয় এবং এটি রাজধানীর প্রথম আধুনিক জবাইখানা। যা ইসলামিক রিলিফ ইউএসএর আর্থিক সহযোগিতায় নির্মাণ করা হয়। অন্যদিকে, মহাখালি ডিএনসিসি মার্কেটের পাশে একটি জবাইখানার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সদ্যনির্মিত জবাইখানাটি উদ্বোধন না হওয়ায় এখনো চালু হয়নি।
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এসএমএম সালেহ ভুঁইয়া আমাদের অর্থনীতিকে জানান, ডিএনসিসি এলাকার ৫টি জোনের প্রতিটিতে ৩টি করে মোট ১৫টি আধুনিক জবাইখানা নির্মাণের সকল কার্যক্রম শেষ হয়েছে। ইসলামিক রিলিফ ইউএসএর আর্থিক সহযোগিতা এবং ডিএনসিসির উদ্যোগে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। তবে জমি সমস্যার জন্য আধুনিক পশু জবাইখানা নির্মাণে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. সাইদুর রহমান বলেন, ডিএসসিসি এলাকায় এ বছর একনেকে দুটি আধুনিক জবাইখানা নির্মাণের অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কাপ্তান বাজার ও হাজারীবাগের পুরাতন জবাইখানা দুটি আধুনিক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে যার পশু সে এসেই জবাই করে, আর আমাদের কয়েকজন পরিচ্ছন্নকর্মী থাকে। চলতি অর্থ বছরে একনেকের বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে কাপ্তান বাজার ও হাজারীবাগ জবাইখানার স্থানে আধুনিক জবাইখানা নির্মাণ করা হবে বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাংস বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের জন্য অত্যন্ত অনুকূল পরিবেশ। যখন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পশু জবাই করা হয় তখন এসব রোগজীবাণু মাংসের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য সবসময় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকেন মাংস ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পরিবেশবান্ধব পশু জবাইখানা একটি নির্দিষ্ট গন্ডির ভেতরে পশু জবাই করার পর তা নগরব্যাপী সরবরাহ করতে হবে। এছাড়া আধুনিক জবাইখানায় পশুর রক্ত, নাড়ি-ভুঁড়ি ও অন্যান্য বর্জ্যসমূহ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিতে বায়োগ্যাস উৎপন্ন করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। অন্যদিকে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা, পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পশু বিশ্রামাগার, সৌরবিদ্যুৎ, ডি-স্কিনিং পোস্ট (চামড়া ছাড়ানো বার), বর্জ্য ও রক্ত সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার সুবিধা, চামড়া, শিং, খুরা এবং হাড় সংগ্রহ এবং ব্যবস্থাপনা, পানি সরবরাহ ও সংরক্ষণ, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা, ব্যবহারকৃত যন্ত্রাংশ জীবাণুমুক্ত করার জন্য গরম পানির ব্যবস্থা, একটি অফিস ও চিকিৎসকের কক্ষ এবং যন্ত্রপাতি রাখার ঘর থাকতে হবে। পশু জবাই নিয়ন্ত্রণ ও জনসাধারণের জন্য মানসম্মত মাংস নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘পশু জবাই ও মাংসের মান নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১১’ নামের একটি আইন বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ নেই বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। আইনে জবাইখানাগুলোতে, জবাইয়ের উদ্দেশ্যে আনা পশু এবং জবাই-পরবর্তী পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা