চতুর্থবারের মত প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নতুন সরকারের যাত্রা শুরু
আসাদুজ্জামান সম্রাট : টানা তৃতীয়বারসহ মোট চতুর্থবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। মাঝে ৭ বছরের বিরতির পর টানা তিন দফায় সরকার গঠন করে অনন্য রেকর্ড গড়েছেন তিনি। গতকাল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে তিনি ও তার মন্ত্রিসভার ৪৬ সদস্য শপথ গ্রহণ করেন। নির্ধারিত ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি অতিথি দিয়ে গতকাল সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয়। আসন সংকুলান না হওয়ায় অনেক অতিথিকে চেয়ার শেয়ার করে বসতে দেখা যায়। এরই মাঝে পিনপতন নিরাবতায় নিয়ম নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছ থেকে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর এবং পরে দায়িত্ব পালনের গোপনীয়তার শপথ নেন। প্রধানমন্ত্রী শপথ নেওয়ার পর রাষ্ট্রপতি তাকে অভিনন্দন জানান। উপস্থিত অতিথিরা হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি শপথ ও গোপনীয়তার শপথে স্বাক্ষর করেন।
প্রধানমন্ত্রী শপথ মঞ্চ থেমে নেমে আসলে ছোটবোন শেখ রেহানা তাকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান। অভিনন্দন গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ রেহানাকে আবেগে জড়িয়ে ধরেন। আদর করে চুমু খান। এরপর রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রাশিদা খানমের সঙ্গে আলিঙ্গন করেন। সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরেন। এ সময়ে সাজেদা চৌধুরী তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে দোয়া করেন এবং চুমু খান। এ সময়ে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী আগত অতিথিদের সালাম জানিয়ে নিজ আসনে বসার আগে স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে করমর্দন করেন।
প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানের পর একে নতুন ২৪জন মন্ত্রীকে শপথ বাক্য এবং গোপনীয়তার শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি। এ সময় স্থান সংকুলান না হওয়ায় সিনিয়রিটির সিরিয়াল মানা সম্ভব হয়নি। পরে ১৯জন প্রতিমন্ত্রী ও ৩ জন উপমন্ত্রীকে শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
শপথ অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিরা নতুন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শেখ রেহানা ছাড়াও তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক এবং তার স্ত্রী পেপ্পি সিদ্দিকীও মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
শপথ অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদকে দেখা যায়নি। এইচ এম এরশাদ ইতিমধ্যেই নিজেকে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে ঘোষণা করেছেন। শপথ অনুষ্ঠানে বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান এমপি ও যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরী এমপি এবং জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম উপস্থিত ছিলেন।
শপথ অনুষ্ঠানে সাবেক মন্ত্রীদের মধ্যে আবুল মাল আবদুল মুহিত, এ এইচ মাহমুদ আলী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, নুরুল ইসলাম নাহিদ ও কামরুল ইসলামসহ বেশিরভাগই উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া উপদেষ্টাদের মধ্যে এইচ টি ইমাম, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ও গওহর রিজভীও ছিলেন বঙ্গভবনে।
এর আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিকালে হালকা আকাশি রঙের শাড়ি পড়ে বঙ্গভবনে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতি তাকে স্বাগত জানান। বেলা সাড়ে ৩টা দরবার হলে প্রবেশ করলে সবাই দাঁড়িয়ে সম্মান জানান। এরপর রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ দরবার হলে পৌছলে বিউগলে জাতীয় সঙ্গীতের সুর বেজে ওঠে। সবাই দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে কণ্ঠ মেলান। রাষ্ট্রপতির আসন গ্রহণের পর পবিত্র কোরআন তেলাওয়তের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠন শুরু হয়। শপথ অনুষ্ঠান শেষে বঙ্গভবনের মাঠে চা চক্রে যোগ দেন সবাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে কথা বলেন। এ সময়ে তাকে বেশ প্রাণবন্তু, উৎফুল্ল ও দৃঢ়চেতা মনে হয়েছে।
শপথ অনুষ্ঠান শেষে নতুন মন্ত্রীরা জাতীয় পতাকাবাহী গাড়িতে করে একে একে বেড়িয়ে আসেন। পরে প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা সরকারি গাড়িতে করে চড়ে বঙ্গভবন ত্যাগ করেন। সম্পাদনা : ইকবাল খান