সৌদি নারী সালওয়া বলেন, ‘ছয়বছর ধরে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করছিলাম’
সান্দ্রা নন্দিনী : সৌদি আরবের নাগরিক সালওয়া আটমাস আগে কানাডায় গিয়ে আশ্রয় নেন। ২৪ বছর বয়সী এই নারী তার এক বোনকে নিয়ে সৌদি আরব থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। বিবিসি
সালওয়ার ভাষায় পালানোর প্রস্তুতি : ছয়বছর ধরে আমরা দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করছিলাম। সৌভাগ্যক্রমে আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম তখন আমার জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করা হয়েছিল। এছাড়া, আমার একটি পাসপোর্টও ছিল। তবে, আমার পরিবার এগুলো আমার কাছ থেকে সরিয়ে নিয়েছিল। তাই আমি আমার ভাইয়ের বাড়ির চাবি চুরি করি এবং দোকানে গিয়ে সেগুলোর নকল তৈরি করি। এভাবে নকল চাবি হাতে আসার পর আমার ও আমার বোনের পাসপোর্ট দু’টি আমাদের হাতে চলে আসে।
একদিন আমার বাবা যখন ঘুমিয়েছিলেন। তখন আমি তার মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার অ্যাকাউন্টে লগ-ইন করি এবং সেখানকার রেজিস্টার্ড ফোন নাম্বারটি বদলে আমার মোবাইল নাম্বার দিয়ে দেই। তার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেই আমি দেশত্যাগের জন্য আমার বাবার অনুমতিপত্র জোগাড় করি। যেভাবে ছাড়তে হলো দেশ : একরাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে আমরা দুইবোন বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ি। আমরা গাড়ি চালাতে জানি না বলে ট্যাক্সি ডাকি। ঘটনাচক্রে সৌদি আরবে বেশিরভাগ ট্যাক্সি ড্রাইভার হলেন বিদেশি হওয়ায় দুইজন নারী নিজেরাই বিমানবন্দরে যাচ্ছেন, এটা নিয়ে তাদের মনে কোনও প্রশ্নের উদয় হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বছরটিতে আমি এক হাসপাতালে কাজ করে যে টাকা জমিয়েছিলাম, তা দিয়েই আমরা বিমানের টিকেট ও জার্মানির ট্রানজিট ভিসা জোগাড় করি। এরপর আমার বাবা আমাদের পালানোর খবর জানতে পেরে পুলিশে খবর দেন। তবে, যেহেতু আমি বাবার ফোন নাম্বার বদলে দিয়েছিলাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যখনই বাবার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছিল, কলগুলো আমার ফোনে বেজে উঠছিল।
যেখানে যাত্রার শেষ : জার্মানিতে পৌঁছানোর পর আমি আইনি সহায়তা পেতে একজন আইনজীবী খুঁজে বের করি যিনি আমাকে রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে সাহায্য করেছিলেন। তার সাহায্যে আমি কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার আবেদনপত্র পূরণ করলাম।
আমার আবেদনপত্র গৃহীত হওয়ার পর আমি জার্মানি থেকে কানাডার টরন্টোতে চলে আসি। যেদিন টরন্টোতে এসে নামলাম, বিমানবন্দরে ক্যানাডার পতাকা দেখে মনটা ভরে গেল। এখন আমি আমার বোনকে নিয়ে মন্ট্রিয়াল শহরে থাকি। এখানে আমার জীবনে কোন শঙ্কা নেই। সৌদি আরব অর্থ-সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও নারীদের স্বাধীনতা বলে কিছুই নেই।