শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর আমানত কমেছে ২০ শতাংশ
রমজান আলী : নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত ঋণ বিতরণের কারণে গত পঞ্জিকা বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে দেশে কার্যরত ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর আমানত কমেছে। শতকরা হিসেবে আগের প্রান্তিকের (মার্চ-জুন) তুলনায় আমানত কমেছে ২০ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ইসলামী ব্যাংকগুলোর আমানতের পরিমাণ বেড়েছে ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। টাকার অংকে এর পরিমাণ হচ্ছে ২ লাখ ২৭ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ঋণ বিতরণের হার বেড়েছে ১৪ শতাংশ। টাকার হিসাবে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। ফলে আলোচ্য প্রান্তিকে ইসলামী ব্যাংকগুলোর মোট আমানত কমেছে ৫ হাজার ২০২ কোটি টাকা বা ১৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে আটটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক ছাড়াও নয়টি প্রচলিত ব্যাংকের ১৯ ইসলামিক ব্যাংকিং শাখা এবং সাতটি প্রচলিত ব্যাংকের ২৫ ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডো রয়েছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব ব্যাংকের মধ্যে পাঁচটি ব্যাংক জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ-আমানতের অনুমোদিত সীমা ৯০ শতাংশ অতিক্রম করে ৭ শতাংশ বেশি ঋণ বিতরণ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ বছরের মার্চ মাসের মধ্যে ব্যাংকগুলোর ঋণ ও আমানত সীমা ৮৯ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সীমার মধ্যে নেমে এলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, শরিয়াহভিত্তিক সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের জুলাইয়ে আমানতের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে আমানত দাঁড়িয়েছে ৯৪৭ কোটি টাকায়।
একইভাবে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের আমানত ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা থেকে ১ হাজার ৭ কোটি, এক্সিম ব্যাংকের ৭২০ কোটি টাকা থেকে ৪৫১ কোটি, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ৬৯১ কোটি টাকা থেকে ৫৫৯ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৪শ’ ৯৩ কোটি থেকে ১শ’ ২৯ কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংকের আমানত ১৯৯ কোটি থেকে ৫৮ কোটিতে নেমেছে।
একই সময়ে ১৩ কোটি টাকা অপরিবর্তিত রয়েছে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের আমানত। তবে ৮৩ কোটি টাকা বেড়েছে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের আমানত। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৬ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে শরিয়াহভিত্তিক এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া বলেন, ‘অতিরিক্ত বিনিয়োগের কারণে আমানত কমেছে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ-আমানত অনুপাত সীমা চলতি বছরের মার্চ থেকে ৮৯ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংক কখনো আমানত সংকটে পড়েনি। বরং অতিরিক্ত আমানত থাকার পর আমরা সরকারি ট্রেজারি বিল এবং বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারি না।’ সম্পাদনা : সোহেল রহমান ও প্রিয়াংকা আচার্য্য