সোহরাওয়ার্দীর বিজয় মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বললেন, জনগণ দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে রায় দিয়েছে
সমীরণ রায় : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছে। তাই দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য কাজ করবে সরকার। যারা ভোট দিয়েছেন, যারা ভোট দেননি, আমরা সকলের তরে, সবার জন্য কাজ করবো। নির্বাচনী অঙ্গীকার অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো। এদেশের জন্য আমার বাবা-মাসহ পরিবার জীবন দিয়ে গেছে। তাই এদেশের মানুষের জন্য জীবন দিতে আমি প্রস্তুত। যে আস্থা এবং বিশ্বাস নিয়ে জনগণ আমাকে ভোট দিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছে; জনগণের সে মর্যাদা আমি রক্ষা করব। প্রয়োজনে আমার জীবন দিয়ে হলেও ভোটের মর্যাদা রক্ষা করব। একই সঙ্গে তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ দেশের রাজনৈতিক দলগুলো অংশগ্রহণ করায় নির্বাচন অর্থবহ হয়েছে।
শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় উপলক্ষে বিজয় সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে দেশবাসিকে ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা ও শুভাশীষ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ কামার-কুমার, জেলে-তাঁতীসহ যারা আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। প্রশাসনের পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র্যাব, সেনা ও নৌবাহিনীসহ যারা সুষ্ঠু নির্বাচনে সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতিও জানাই কৃতজ্ঞতা। একই সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। বিজয় পাওয়া যত কঠিন, জনগণের জন্য কাজ করে সেই বিজয় রাখা কঠিন, সেই কঠিন কাজটি আমাদের করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের জনগণ দীর্ঘদিন পর স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে, সেই বিষয়টি মাথায় রেখে সার্বিকভাবে কাজ করে যাবো। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও স্বাধীনতাবিরোধীদের এদেশে কোনো স্থান নেই। সকলকে মনে করিয়ে দিতে চাই, জনগণ শান্তি চায় বলেই আমাদের রায় দিয়েছেন। জনগণ দারিদ্র ও ক্ষুধামুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে রায় দিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পক্ষে রায় দিয়েছে। আমরা এদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।
৭৫’র ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ সপরিবারের হত্যাকা-ের কথা স্মরণ করে আবেগ আপ্লুত হয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ধানম-ির বাড়িতে ৭৫’র ১৫ আগস্ট বাবা-মাসহ সপরিবারে হত্যা করা হয়। এমনকি আমার ছোট ভাই শেখ রাসেলকেও পর্যন্ত হত্যাকারীরা ক্ষমা করেনি। কারণ তাদের চাওয়া ছিল বঙ্গবন্ধুর কোনো রক্তের চিহ্ন রাখা হবে না। আমি ও ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশে ছিলাম বলে বেঁচে গেছি। আমরা দেশে ৬ বছর আসতে পারিনি। পরে দেশে এসে দেখেছি মানুষের ক্ষুধার যন্ত্রণা। তখনই প্রতিজ্ঞা করে দেশের মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছি। ব্যক্তিগত জীবনে আমার কোনো চাওয়া পাওয়া নেই। আমার একটাই চাওয়া দেশের একটি মানুষও ক্ষুধার্ত থাকবে না। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। সেটাই আমার একামত্র লক্ষ। কি পেলাম আর কি পেলাম না, সেটি বড় কথা নয়, দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবোই। প্রতিটি গ্রাম, আমার গ্রাম, আমার শহর। সেইভাবেই গড়ে তুলব। প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫’র পর দেশকে দাবিয়ে রাখতে চেয়েছিল, কিন্তু বাঙালী জাতিকে দাবিয়ে রাখা যায়নি। স্টোই প্রমাণ হয়েছে। কবি সুকান্তের কবিতার লাইনের মতো ‘চলে যাব-তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি-নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গিকার।’
তিনি বলেন, ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষ ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। দেশ উন্নত হবে সেইভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই এদেশের জনগণের প্রতি। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করবই।
বিজয় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, সভাপতি ম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ। সম্পাদনা : সালেহ্ বিপ্লব