অন্য মেয়রদের মন্ত্রী মর্যাদা পাওয়ার সম্ভাবনা কম প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনায় ৩ জন মেয়র মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর মর্যাদা পেয়েছেন
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : সম্প্রতি ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের তিন সিটি কর্পোরেশনের মেয়ররা মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর পদমর্যাদা পেলেও অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদের এই ধরনের পদমর্যাদা পাওয়ার সম্ভাবনা আপাতত নেই । এমনকি পদমর্যাদা পাওয়া তিন সিটি কর্পোরেশনের পরবর্তী মেয়ররা এই ধরনের পদমর্যাদা পাবেন কিনা সেটাও নিশ্চিত নয়। কারণ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বিবেচনায় ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের মেয়রদের এই পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশনসহ কোনো মেয়রেরই পদমর্যাদার বিষয়টি নির্দিষ্ট করা নেই। সিটি কর্পোরেশন আইনেও মেয়রদের পদমর্যাদা বিষয়ে কিছু বলা নেই। তাই সরকারগুলো নিজেদের মতো করে পদমর্যাদা নির্ধারণ করে দেয়।
এবারও ঢাকার দুই মেয়র ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের এক মেয়রকে মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি স্থায়ী নয় বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেছেন, এর আগেও সরকার প্রধানের নির্দেশে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদের প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এর জন্য সুনির্দিষ্ট আইন করা হয়নি। ব্যক্তি বিশেষের উপর এই পদমর্যাদাগুলোর প্রাপ্তি ঘটছে। দেশের বাকি ১১ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসবে কিনা এ প্রশ্নে ওই কর্মকর্তা বলেন, আমার জানা মতে সুযোগ খুবই কম।
স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে জানায়-খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়ররা প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদাসহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন।
তবে ২০১৩ সালের ৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, সিলেট ও রংপুরের মেয়রদের এমপিদের উপরের মর্যাদা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানককে চিঠি দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
জানা গেছে, এরশাদ সরকারের সময়ে ঢাকার মেয়র হিসেবে নাজিউর রহমান মঞ্জুরকে প্রথম প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ আমলের দুই মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ও মোহাম্মদ হানিফ পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদা পেয়েছিলেন। সরকারগুলো এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এই মর্যাদা নিশ্চিত করেন। কিন্তু ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ার পর এতদিন দুই মেয়রের পদমর্যাদা সুনিশ্চিত করা হয়নি।
গত মঙ্গলবার এক প্রজ্ঞাপনে তিন মেয়রের পদমর্যাদা ঘোষণা করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকার এ মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে, নিজ নিজ পদে থাকাকালীন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন মন্ত্রীর এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বেগম সেলিনা হায়াত আইভী উপমন্ত্রীর পদমর্যাদা, বেতন-ভাতা ও আনুষাঙ্গিক অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্য হবেন।
এ ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম গতকাল এই প্রতিবেদককে বলেন, এটা প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সম্মান। তবে এটা সিটি কর্পোরেশনের আইনে নেই। এর আগেও একইভাবে ঢাকার মেয়ররা মন্ত্রীর পদমর্যাদা পেয়েছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল মালেকও প্রায় একই কথা বলেন। তিনি বলেন, নতুন এই পদমর্যাদা ব্যক্তি আনিসুল হক ও ব্যক্তি সাঈদ খোকনের ক্ষেত্রে ততদিন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে যতদিন তারা এ পদে বহাল থাকবেন। এটা তাদের প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সম্মান।
আব্দুল মালেক বলেন, পরবর্তীতে আবার মেয়র নির্বাচন হলে মেয়ররাও মন্ত্রীর মর্যাদা পাবেন তা কিন্তু নয়।
উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে ১১টি সিটি কর্পোরেশন রয়েছে। এর মধ্যে ফৌজদারি মামলায় আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করায় খুলনা, গাজীপুর, রাজশাহী ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এসব সিটি কর্পোরেশনগুলোর বেশিরভাগই বিএনপি সমর্থক। এসব মেয়রের বেশিরভাগই এখন বিভিন্ন মামলার আসামি, কেউ কেউ জেল খাটছেন। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম