আমি বলছি না নাগরী লিপি বাংলা ভাষার কোনো গৌরবের ব্যাপার। হীনমন্যতা বা সংকীর্ণতা থেকে উদ্ভূত কোনো কিছু গৌরবের হতে পারে বলে আমি মনে করি না। বাংলা ভাষার প্রতি অবজ্ঞা ও হীনমন্যতা থেকেই নাগরী লিপির উদ্ভব হয়েছিল। সুতরাং এতে গৌরবের কিছু আছে বলে আমি মনে করি না। কিন্তু যে কারণেই হোক এই লিপির উদ্ভব তো হয়েছিল। প্রায় ছয়’শ বছর ধরে সিলেট অঞ্চলে প্রচলিত ছিল এই লিপি। একটা সময় নাগরী লিপি চর্চায় ভাটা পড়ে যায়। পড়াটাই স্বাভাবিক। বড় বৃক্ষের নিচে ছোট গাছ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। বাংলা লিপি তো বিশাল এক বৃক্ষ। এই বৃক্ষের তলায় নাগরী লিপি দাঁড়াবে কিভাবে? স্বাভাবিক কারণেই তা আজ বিলুপ্ত। কিন্তু ভালো হোক মন্দ হোক, এটি এখন আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। গবেষকরা সততই ঐতিহ্যের অনুসন্ধান করেন। সেই অনুসন্ধানের কাজটা করেছেন গবেষক মো. আব্দুল মান্নান ও মোস্তফা সেলিম। নাগরী লিপিতে রচিত পঁচিশটি গ্রন্থ তারা উদ্ধার করেছেন। নতুন করে আবার প্রকাশ করেছেন মোস্তফা সেলিমের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান উৎস প্রকাশন থেকে। আমি এটিকে একটি মহৎ কাজ হিসেবে সাব্যস্ত করতে চাই। কাজটা করার কথা ছিল রাষ্ট্রের। আমাদের একটা ভাষা ইনস্টিটিউট আছে। পৃথিবীর নানা ভাষা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে। কিন্তু বাড়ির কাছে আরশি নগরের খোঁজ তারা রাখলেন না। একবারও প্রয়োজনবোধ করলেন না নাগরী লিপির গ্রন্থগুলো পুনরুদ্ধারের। মোস্তফা সেলিম কাজটি করেছেন। এ জন্য তাকে অভিনন্দন।
লেখক: কথাসাহিত্যিক
সম্পাদনা: জব্বার হোসেন