অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাংলাদেশ-জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্কের আধুনিক পর্যায়ে প্রাধান্য পেয়েছে বলে মনে করেন ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ
নাঈমা জাবীন : এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেছেন, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যস্বার্থ দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের আধুনিক পর্যায়ে প্রাধান্য পেলেও বর্তমান সম্পর্কের ভিত্তি সুদীর্ঘ সময়ের গভীরে প্রোথিত। ওইসিডি সদস্য দেশগুলোর মধ্যে শিল্পোন্নত জাপানই সর্বপ্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার সময় জাপান তখনও মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির প্রভাব বলয়েরই একটি দেশ। সূত্র : যুগান্তর
তিনি আরও বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরক্ষা চুক্তির বদৌলতে জাপান ওকিনাওয়া দ্বীপের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায় সে বছর। ১৯৭২ সালেই জাপানের সঙ্গে চীনের দীর্ঘদিনের বিরোধ প্রশমিত হয়ে সিনো-জাপান কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিপরীত অবস্থান গ্রহণ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো চীনও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে পাকিস্তানের মিত্র দেশ হিসেবে বিপরীত অবস্থানে ছিলো। ঠিক এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে জাপান সরকার ও জনগণের সমর্থন এবং বিজয়ের অব্যবহিত পরে বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের সিদ্ধান্ত নিয়ে জাপান নিঃসন্দেহে তাৎপর্যবাহী ও সুদূরপ্রসারী কূটনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে অবর্ণনীয় ক্ষয়ক্ষতির সংবাদে এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের জনগণ তাকেশি হায়াকাওয়ার চিন্তাচেতনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে। জাপানের ডায়েটে প্রভাবশালী সদস্য হিসেবে হায়াকাওয়া বাংলাদেশের জনগণের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি জাপানি জনগণ ও সরকারের সমর্থন সম্প্রসারণের নেপথ্যে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালের মার্চে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে যে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ শুরু করে, হায়াকাওয়া তার প্রতি জাপান সরকারের উদ্বেগ প্রকাশ এবং বিশেষ করে জাপানি জনগণের প্রতিবাদ জানানোর প্রেক্ষাপট তৈরিতে সাংগঠনিক উদ্যোগ নেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জাপানি মিডিয়ায় বিশেষ গুরুত্ব পায়। বাংলাদেশের শরণার্থীদের সাহায্যার্থে অর্থ সংগ্রহ ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি জাপানিদের সমর্থন সমন্বয়ে জাপানের বুদ্ধিজীবী, শিল্পমালিক, শ্রমিক, ছাত্রসমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে ছিলেন তিনি।
সেসময় জাপান প্রবাসী পূর্ব পাকিস্তানিদের প্রয়াস-প্রচেষ্টার সঙ্গেও একাত্ম হয়েছিলেন হায়াকাওয়া। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমেরিকা বলয়ের দেশ হওয়া সত্ত্বেও উন্নত বিশ্বের শিল্পসমৃদ্ধ দেশগুলোর মধ্যে জাপানই প্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়, তারই প্রচেষ্টায় ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। স্বীকৃতিদানের এক মাসের মধ্যে ঢাকায় জাপানি দূতাবাসের কার্যক্রম শুরু হয় এবং ১৩-১৪ মার্চ হায়াকাওয়ার নেতৃত্বে তিন সদস্যের জাপানি সংসদীয় প্রতিনিধি দল প্রথম বাংলাদেশ সফরে আসেন। দেশে ফিরে ২৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী সাতোর কাছে পেশ করা রিপোর্টে তিনি প্রস্তাব রাখেন ক. বাংলাদেশেকে ১০ মিলিয়ন ডলারের জরুরি অনুদান অবিলম্বে প্রদান এবং খ. পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের হিস্যা আদায়ে জাপানের মধ্যস্থতা। তার সুপারিশ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী সাতোর নির্দেশে ২৮ মার্চ ১৯৭২ সালে জাপান বাংলাদেশে প্রথম অর্থনৈতিক সার্ভে মিশন পাঠায়। ওই বছর ৬ জুন জাপান-বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন এবং কিছুকাল পর জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হলে হায়াকাওয়া তার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন এবং আমৃত্যু এর নেতৃত্বে ছিলেন।