বাধা মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে হয় : মাসুম মিজান
নিজস্ব প্রতিবেদক : বর্তমানে আল-আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক লিমিটেডে ফার্স্ট এসিস্টেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (পিআরডি) হিসেবে কর্মরত আছেন। কর্পোরেট জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে তাকে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। নানা রকম বাধা আসলেও পিছু হটেননি। লেগে ছিলেন নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে। আর মানুষ যখন নিজ দক্ষতায় সফলতা নিয়ে আসে, সেই সফলতা শুধু তার একার থাকে না। সেটা আগামীর সৈনিকদের জন্যও হয়ে ওঠে প্রেরণা।
এক আলাপচারিতায় উঠে এলো তার জীবনের গল্প।
মাসুম মিজানের জন্ম বরিশাল নগরীর গোরস্থান রোডের নিজ বাড়িতে। তিন ভাইবোনের মধ্যে মাসুম দ্বিতীয়। পড়াশুনা করেছেন বরিশাল জিলাস্কুল, বরিশাল কলেজ এবং বিএম কলেজে। ছোটবেলা থেকেই গান কবিতা লিখতে খুব পছন্দ করতেন। শিক্ষা জীবনের শেষে এসেই কাজ শুরু করেন বরিশালের স্থানীয় দৈনিক দক্ষিণাঞ্চল পত্রিকায়। সেই থেকে শুরু হয় গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে তার সংগ্রামী পথচলা। ধীরে ধীরে ভালো ভালো কিছু কাজ করে নিজেকে পরিচিত করে তুলেন। শুরুতে পরিবারের ইচ্ছে না থাকলেও তিনি গণমাধ্যমের মূল ধারায় কাজ করেছেন প্রায় দেড় দশক। পাঁচটি জাতীয় এবং দুটি আঞ্চলিক পত্রিকায় বিভিন্ন পদে দায়িত্বপালন করেছেন। বরিশাল বিএম কলেজ সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। খেলেছেন বরিশালের প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগে, সাংস্কৃতিক মজলিসের হয়ে। এছাড়া বরিশালের ঐতিহ্যবাহী ব্যান্ড দল ক্রিডেন্সের পুনর্গঠনেও জড়িত ছিলেন।
ঢাকার সাংবাদিকতায় মাসুম মিজান বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের বিভিন্ন পদে চারবার নির্বাচিত হয়েছেন। সবশেষ ২০১৮ সালে ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়শনের (ক্যাব) সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। কিন্তু প্রতিটা সময়েই নিজেকে বিভিন্ন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এগিয়ে নিতে হয়েছে।
কিভাবে একজন গণমাধ্যম কর্মী থেকে ব্যাংকার হয়েছেন জানতে চাইলে তিনি মৃদু হেসে উত্তর দিলেন… এটাই ভাগ্য। পড়াশুনা শেষে পরিবারের ইচ্ছে ছিলো আমার গোছানো একটি জীবন, এমন একটি চাকরি।
তখনও বিভিন্ন সেক্টরে চাকরির সুযোগ ছিলো, কিন্তু আমার প্রবল ইচ্ছেটা ছিলো কেবলই সাংবাদিকতায়। অবশ্য তখন না হলেও অবশেষে পরিবারের ইচ্ছেটা এখন এসে পূরণ হয়েছে। তবে বর্তমানেও আমার কাজের ধরন সাংবাদিকতার মতোই। আধুনিক ব্যাংকিংয়ে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের একটি বিশেষায়িত উইং হলো জনসংযোগ বিভাগ। এর বেশিরভাগ কাজ গণমাধ্যম এবং গণমানুষ সম্পৃক্ত। সাধারণ ব্যাংকিং-এর সাথে যার কোনো মিল নেই। যেমন আমাদের ব্যাংকের একটি ঘরোয়া ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয় জনসংযোগ বিভাগ কর্তৃক। প্রবাহ নামে ওই ম্যাগাজিনের বার্তা সম্পাদকের দায়িত্বে আছি।
এই অবস্থানে আসার পেছনে আপনার শুরু কিভাবে জানতে চাইলে বলেন, সবার মত আমিও জীবনে অনেক সংগ্রাম করেছি। কষ্ট করেছি। আমি পড়াশুনায় খুব বেশি মনোযোগ দিতে পারিনি। খেলাধুলা, গান, কবিতা ও লেখালিখি নিয়েই বেশি সময় কাটাতাম। সত্যি বলতে এক কথায় আমার প্রেমই আমার সফলতার অন্যতম মূল শক্তি। আজ আমি যতটা পথ এসেছি তার পেছনে মা-বাবাসহ পরিবারের পাশাপাশি আমার সহধর্মিনির অনেক অবদান রয়েছে।
নিজের প্রতি এই কনফিডেন্স কি করে এলো জানতে চাইলে বলেন, নিজেকে চিনতে হবে এবং বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে সঠিক গন্তব্য নির্ধারন করতে হবে। পাশাপাশি জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় বা অপরিহার্য প্রতিটি কাজ করতে হবে মন দিয়ে। নিজেকে বুঝতে ও সময়ের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে চলতে পারলে অনেক কাজই সহজ হয়ে যায়।
অনেক প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছেন, সফলও হয়েছেন। কোন বাধা পেয়েছেন কি বিষয় জানতে চাইলে বলেন, অবশ্যই, বাধা তো আসবেই। সেসব বাধা মোকাবেলা করেই সবাইকে এগিয়ে যেতে হয়।
তাহলে আপনি নিয়মিতই নতুন নতুন অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গিয়েছেন কি না জানতে চাইলে বলেন. হ্যাঁ। আমি নিয়মিত নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছি। কোথাও হেরেছি আবার কোথাও পেয়েছি সফলতার দেখা।
বর্তমান সময়ের সাংবাদিকতায় কতটা পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন এমন বিষয় জানতে চাইলে বলেন, হ্যাঁ, অনেক পরিবর্তন হয়েছে। শুধু আমাদের দেশেই নয়, পুরো বিশ্বব্যাপী এ পরিবর্তন এসেছে। তথ্য প্রযুক্তির বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সঙ্গে পাল্টে গেছে গণমাধ্যমের গতিপ্রকৃতি। উন্নত বিশ্বের কথা বাদই দিলাম, বর্তমানে আমাদের দেশের মানুষ খুব দ্রæততার সঙ্গে তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ছেন। এখন একটা সংবাদ পেতে আর অপেক্ষা করতে হয়না। অনলাইন আর স্যাটেলাইট টিভির মাধ্যমে যখনকার খবর তখনই পৌঁছে যাচ্ছে সবার কাছে। যত দিন যাচ্ছে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে দেশের সব নামি-দামি পত্রিকা ও টিভি তাদের অনলাইন ভার্সনের দিকে গুরুত্ব বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে। এসব কিছু ছাপিয়ে এখন ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বেশ শক্ত অবস্থান করে নিয়েছে। এখন বহু খবর ফেসবুক থেকে উৎপত্তি হয়ে স্থান করে নিচ্ছে প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমে। তাই সংবাদকর্মী যেন আজ ঘরে ঘরে। তবে একটি কথা আজ না বললেই নয়। সাংবাদিকতা একটি মহৎ ও সম্মানজনক পেশা। আগে একজন গণমাধ্যমকর্মীর যে সম্মান ছিলো তা এখন অনেকটাই কমে যাচ্ছে। এখন আর আগের মত সম্মান পাওয়া যায়না। এর জন্য আমি দায়ী করবো প্রযুক্তির সহজলভ্যতার অপব্যবহারকে। অনেককে দেখা যাচ্ছে, প্রযুক্তি সম্পর্কে কিছুটা পারদর্শিতা থাকায় তিনি সহসাই একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের মালিক বনে যাচ্ছেন। তার কোনো রিপোর্টারের প্রয়োজন নেই, শুধু বসে বসে বিভিন্ন প্রফেশনাল নিউজ পোর্টাল থেকে কাট কপি পেস্ট করেই চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে সরকারি কোন নীতিমালা না থাকায় এটা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। যথাযথ নীতিমালা প্রণয়ন হলে এ সমস্যার অবসান হবে।
তরুণদের উদ্দেশ্যে কি বলবেন জানতে চাইলে বলেন, আমি যদি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলি, আমি পড়াশুনায় ছিলাম মধ্যম সারির। আমার রেজাল্টও ছিল মোটামুটি। তবে আমার মধ্যে ইচ্ছাশক্তি ছিলো প্রবল। যখন যেটা করেছি তা মন দিয়েই করেছি। আমি মনে করি ক্যারিয়ার নিয়ে আগে নিজের মধ্যে সুনির্দিষ্ট কমিটমেন্ট থাকা উচিত। প্রত্যেক তরুণকে ভেবেচিন্তে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। বিশেষকরে সাংবাদিকতা করার আগে সবার ভাবা উচিত এটা তার জন্য কতটা সম্ভব হবে। কারণ, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এখনো গণমাধ্যমের অবকাঠামো ততোটা মজবুত হতে পারেনি। সূত্র: বাংলা