ধান ছাড়াও কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আছে ১৩৮টি ফসলের ১৮ হাজারের বেশি শস্য জিন
মতিনুজ্জামান মিটু : ধান ছাড়াও দেশের কৃষি সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ১৩৮টি ফসলের ১৮ হাজার ১২৯টি শস্য জিন মজুদ আছে। অন্যান্য ফসলের মধ্যে খাদ্যশস্যের ১ হাজার ৭২৭, ডাল জাতীয় ফসলের ৩ হাজার ৪৬০, তেল জাতীয় ফসলের ৪৫৫, সবজির ৩ হাজার ৯০২, মসলার ১৯৯, ফলের ১৭০, রুট অ্যান্ড টিউবারের ৯২, আঁশ জাতীয় শস্যের ৬০টি জিন মজুদ রয়েছে। এসব তথ্য জানিয়ে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) সিনিয়র লিয়াজো অফিসার ও গবেষণা দপ্তরের পরিচালক কৃষিবিদ এম. আব্দুল মোমিন বললেন, মাঠ পর্যায়ে ২০টি মেডিসিনাল ও অ্যারোমেটিক উদ্ভিদজাত শস্যের জিন রয়েছে। এসব জিন ব্যবহার এবং গবেষণার মাধ্যমে ২৮টি গমের, ১১টি হাইব্রিডসহ ১৯টি ভুট্টার জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই)। কন্দাল ও উদ্যান জাতীয় ফসলের মধ্যে আলু, মিষ্টি আলু, কচু ও সবজির বিভিন্ন জাত উদ্ভাবন করা গেছে। এর মধ্যে ৫৬টি উচ্চফলনশীল আলু, সবজি জাতীয় ২৯ ফসলের মোট ৮৫টি উচ্চফলনশীল জাত, ডাল জাতীয় ছয় ধরনের ফসলের ৩১টি উচ্চফলনশীল জাত, তেলজাতীয় আটটি ফসলের ৪০টি উচ্চফলনশীল জাত, ২৬ ধরনের ফলজাতীয় ৬২টি উন্নত জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। বিএআরআইয়ের মসলা গবেষণা কেন্দ্রে পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, আদা, হলুদ ইত্যাদি ফসলের ২২টি জাত এবং ফুলের ১৬টি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।
ব্রি’র রাইস জার্মপ্লাজম সেন্টার বা জিন ব্যাংক সম্পর্কে কৌলিসম্পদ ও বীজ বিভাগের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামানের বরাতে ব্রি’র কৃষিবিদ মোমিন আরো বললেন, প্রযুক্তিগত জ্ঞান বৃদ্ধির ফলে উফশী জাতের ভালো মানের ধান উদ্ভাবন করা হচ্ছে। ব্রিডিং সাইকেল শর্ট করতে জিন ব্যাংকের সম্পদকে কাজে লাগিয়ে মার্কার অ্যাসিস্ট্যান্স সিলেকশন পদ্ধতি ব্যবহার করে কম সময়ে জাত উদ্ভাবন করা হচ্ছে। এছাড়া সংরক্ষিত জিনকে কাজে লাগিয়ে জীবনরহস্য উন্মোচনও করা হচ্ছে।
তিনি তার ‘ধান, ‘ধ্যান ও বিবিধ বিজ্ঞান’ গ্রন্থে রাইস জিন ব্যাংক ও জার্মপ্লাজম বিষয়ে জানালেন, ইরির বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত ৩০০০ ধানের জাতের জিনোম সিকোয়েন্স করেছেন যেখানে বাংলাদেশের ১৮৬টি জাত রয়েছে। এতে বিভিন্ন ঘাত সহনশীল উফশী ধানের জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে। এছাড়া, ব্রি’তে এসব জাতের ডিএনএ ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ব্রি তার জন্মলগ্ন (১০ অক্টোবর ১৯৭০) থেকেই সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এ সমস্ত জাতগুলোকে সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজ শুরু করে। ১৯৭৪ সালে স্বল্পমেয়াদী রাইস জিন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই জিন ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হলেও এটি পূর্ণতা পায় ২০০৭ সালের দিকে। বর্তমানে এই সংরক্ষণাগারে ৮ হাজারের বেশি দেশি-বিদেশি ধানের জাতের নমুনা সংরক্ষিত আছে। যার মধ্যে, একেবারেই স্থানীয় জাত হলো ৫ হাজার। প্রত্যেক নমুনায় রাখা হয়েছে ২০০ থেকে আড়াই গ্রাম বীজ। বছরের পর বছর নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে সংগ্রহ করে রাইস জিন ব্যাংক সংরক্ষণ করেছে, সংগ্রহ ও সংরক্ষণের এই প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত রয়েছে। এই ভূ-সম্ভুত জাতগুলো বিজ্ঞানীদের ধ্যান-জ্ঞান। তারা এই জাতগুলো সযতেœ সংরক্ষণ করেন এবং তাদের ভবিষ্যৎ গবেষণার রসদ হিসাবে ব্যবহার করে থাকেন। সম্পাদনা : আনিস রহমান