ভরনপোষণের দাবিতে সন্তানের বিরুদ্ধে বাবা-মার মামলা
আসিফুজ্জামান পৃথিল : চট্টগ্রামে কাপড়ের ব্যবসা করতেন আবু তাহের। ছিলেন ছোট ব্যবসায়ী। কষ্ট করে সন্তানদের মানুষ করেছেন তিনি। তবে অবসর গ্রহণের পর সন্তানদের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন তিনি। একসময় তার পুতও তার এবং তার স্ত্রীর ভরনপোষণ বন্ধ করে দেয়। ভরনপোষণ আদায়ে নিজ সন্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন আবু তাহের। বিবিসি
আবু তাহের জানান, তার পুত্র সন্তান হিসেবে অত্যন্ত ভালো ছিলো। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘ছেলেকে বড় করতে গিয়ে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে একটি কঠিন সময় পার করতে হয়েছিলো। কিন্তু বিয়ের পরই ছেলেটা পাল্টে গেলো। বাবা মায়ের দেখভাল করা বন্ধ করে দিলো।’ মেয়ের কাছ থেকে কিছু সহযোগিতা পেলেও বেশ কষ্টই করতে হচ্ছিলো ৭৫ বছর বয়সী আবু তাহেরকে। আর এ কারণেই কোনো উপায় না দেখে শেষ পর্যন্ত ছেলে মোহাম্মদ শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এটা আমার জন্য অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত ছিলো। সবাই অনেকদিন ধরেই বলছিলো মামলা করার কথা কিন্তু আমি সেটি করতে চাইনি। কিন্তু আর কোনো উপায় নেই দেখে মামলা করলাম।’ যদিও পুত্র শাহজাহান অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। শাহজাহান একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। তার দাবি তিনি বাবা-মাকে সহায়তা করেন। তার দাবি তার বাবা তার নামে মামলা করেছেন তাকে অসম্মানিত করার জন্য।
পরিবারের মদ্যে এরকম টানাপোড়েনের ঘটনা সারা বিশে^ই ঘটে। কিন্তু এ ধরণের মামলার ঘটনা নজিরবিহীন। বাংলাদেশে বাবা মাকে সহায়তা নিশ্চিত করতে করা পিতা-মাতা ভরনপোষন আইনের আওতায় মামলা করেছে আবু তাহের। সিঙ্গাপুর এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ। দেশটির আইন অনুযায়ী, বয়স্ক বাবা -মা যারা নিজেদের উপার্জনের সক্ষমতা নেই তারা সন্তানদের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা চাইতে পারেন। তারা মামলাও করতে পারেন যদি সন্তান সেটি না করে। আদালত মাসিক একটি ভাতা বা এককালীন অর্থ সহায়তার নির্দেশ দিতে পারেন। আবার এটি দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতেও হতে পারে। ২০১৭ সালে বিশটি মামলা ট্রাইব্যুনাল ফর মেইনটেনান্সে নিষ্পত্তি হয়েছে। চীন, ভারত ও বাংলাদেশে প্রায় একই পদ্ধতি কাজ করছে। কিছু ক্ষেত্রে সন্তানদের জরিমানা ও জেল দেওয়ারও নজির আছে। চীনের সিচুয়ান প্রদেশে সম্প্রতি এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। সেখানে পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্ককে দুবছর পর্যন্ত জেল দেওয়া হয়েছে বয়স্ক বাবাকে পরিত্যাগ করার জন্য।
আইনগুলো আসলে বয়স্কদের দারিদ্র্যতার দিকেই বেশি দৃষ্টি দিয়েছে এবং এটি দীর্ঘমেয়াদী দেখভালের জন্য নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের ৮০ ভাগ বয়স্ক মানুষ বসবাস করবে নি¤œ ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে। বাংলাদেশে যে ব্যবস্থা আছে সেটি তাহেরের মতো ব্যক্তির জন্য সহায়কই হবে। তিনি আদালতের বাইরে ছেলের সঙ্গে একটি সমঝোতা করেছেন। সে অনুযায়ী সন্তান মো: শাহজাহান প্রতি মাসে তার বাবাকে দশ হাজার টাকা দেবেন বলে সম্মত হয়েছেন। তাহের বলছেন, ছেলে কথা রাখলে তিনি আদালত থেকে মামলা তুলে নেবেন। সম্পাদনা : ইকবাল খান