ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৩ হাজার
রমজান আলী : দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি কোটিপতির সংখ্যাও দিনে দিনে বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারী ছিলো ৬২ হাজার ৩৮ জন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারী দাঁড়িয়েছে ৭২ হাজার ৮১২ জন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৮ সালে সেপ্টেম্বরের শেষে ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা ব্যক্তি রয়েছেন ১ হাজার ৪৩ জন। ২০১৭ সালের একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল ৯৪১ জন। ব্যাংকে এককোটি টাকা আমানত রাখা ব্যক্তি ৫৭ হাজার ২৩৯ জন। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল ৫৪ হাজার ৯৭০ জন। এই হিসাবে একবছরের ব্যবধানে এককোটি টাকার ওপরে আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েছে ২ হাজার ২৬৯ জন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। এই সময় পর্যন্ত পুরো ব্যাংক খাতে হিসাবধারী রয়েছেন ৯ কোটি ৩৮ লাখ ৪৫ হাজার ২৭৮ জন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৪০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা ব্যক্তি রয়েছেন ৩৭৯ জন। ৩৫ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ২১২ জন। ৩০ কোটি টাকারও বেশি আমানত রেখেছেন ৩২৩ জন। ২৫ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ৫০৯ জন। ২০ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ৮৫৮ জন। ১৫ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ১ হাজার ৩১৬ জন। ১০ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ২ হাজার ৬৯৭ জন। পাঁচ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ৮ হাজার ২৩৬ জন।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি ছিলেন মাত্র পাঁচজন। ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ জনে। জিয়াউর রহমান সরকারের আমলে (ডিসেম্বর ১৯৮০) এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৮ জনে। এরশাদ সরকারের পতনের সময় ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা ছিল ৯৪৩ জন। ১৯৯৬ সালের জুনে কোটিপতি ছিলেন ২ হাজার ৫৯৪ জন। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ হাজার ১৬২ জনে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৮৮৭ জনে। ২০০৮ সালে হয় ১৯ হাজার ১৬৩ জন। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে বেড়ে দাঁড়ায় ২৩ হাজার ১৩০ জনে। ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা হয় ২৯ হাজার ৫৩৭।
এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড.এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেশে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বাস্তবে হয়তো আরও বেড়েছে। তাই সমাজে বৈষম্য বাড়ছে। কোটিপতিদের একটা বড় অংশ কালো টাকার মালিক। তিনি বলেন, সমাজে একটি বিশেষ শ্রেণি ধনী হয়ে যাচ্ছে। অন্য শ্রেণি পেছনে পড়ে যাচ্ছে। দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো না থাকায় কোটিপতিদের আমানত বাড়ছে। সম্পাদনা : নুসরাত শরমীন