চট্টগ্রামে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে সব হারানো বস্তিবাসীর আহাজারি
ফাতেমা আহমেদ : শনিবার ভোররাতে চট্টগ্রামের চাক্তাইয়ে রাজাখালী খাল সংলগ্ন ভেড়া মার্কেট বস্তিতে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে গেছে ২০০ ঘর। জীবন্ত দগ্ধ হয়েছেন তিন পরিবারের আটজন। ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিটের ১০টি গাড়ি প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নেভালেও বস্তির হাজার খানেক বাসিন্দা সর্বস্ব হারিয়ে এখন হতবিহ্বল। সূত্র: বিডিনিউজ
কর্ণফুলীর তীর সংলগ্ন মেরিন ড্রাইভ সড়কের লাগোয়া জমিতে ওই বস্তিটিতে স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন টিনের ছাউনি আর বেড়ার ছাপড়া দিয়ে এসব ঘর তুলে ভাড়া দিয়েছিলেন নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষের কাছে। এসব ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেও পানি বা গ্যাসের সংযোগ ছিলো না।
অগ্নিকা-ে একই পরিবারের ৭জন সহ ৯ জন প্রাণ হারিয়েছে। এদের মধ্যে ৩ জন শিশু। মৃতরা হলেন রহিমা আক্তার (৫০), তার মেয়ে নাজমা (১৪), ছেলে মো. জাকির (৯), মেয়ে নাসরিন (৪), আয়েশা আক্তার (৩৭), তার বোনের ছেলে মো. সোহাগ (১৮), হাসিনা আক্তার (২৫) অজ্ঞাত আরেকজন।
গৃহবধূ রহিমা আক্তারের ভাই আকবর জানান, ‘আমরা সবাই ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলাম। রাত তিনটার দিকে হঠাৎ চিৎকার শোনে ঘর থেকে বের হয়ে দেখি পুরো কলোনিতে আগুন জ্বলছে। এর মধ্যে তাড়াহুড়ো করে বের হতে গিয়ে অনেকে পড়ে যায়। আমার পরিবারের সবাইকে নিয়ে নিরাপদে বের হতে পারলেও আমার বোনসহ অন্যরা বাসার ভেতরে আটকা পড়ে। তাদের ঘর বস্তির মাঝখানে হওয়ায় কেউ তাদের উদ্ধার করতে পারেনি। রহিমার ঘরের কাঠামো ও জিনিসপত্র কিছুই অবশিষ্ট নেই। সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগার পর প্রথমে রহিমা বের হয়ে আসছিলো। কিন্তু তার ছেলেমেয়েদের রক্ষা করতে গিয়ে সে আর বের হতে পারেনি।
রহিমার ঘরের কাছেই ছিলো স্বামী পরিত্যক্তা আয়েশা আক্তারের (৩৭) ঘর। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর আয়েশা ও তার বোনের ছেলে সোহাগের (১৯) পোড়া লাশ উদ্ধার হলেও তার নিজের মেয়ে ঋতু আক্তারের (১২) কোনো খোঁজ পাননি স্বজনরা।
আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন বলেন, তারা মোট আটজনের লাশ উদ্ধার করেছেন। এর মধ্যে একজনের লাশ শনাক্ত করা যায়নি। লাশটি এতটাই পুড়ে গেছে যে নারী না পুরুষ তাও বোঝা যাচ্ছে না।
গতকাল সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, অগ্নিকা-ের ঘটনা তদন্ত এবং ক্ষয়ক্ষতি অনুসন্ধানে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে লাশ দাফনের জন্য ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সম্পাদনা : মুরাদ হাসান