৮ মাসে রপ্তানি আয় ২ হাজার ৭৫৬ কোটি ডলার, বেড়েছে ১৩ শতাংশ
স্বপ্না চক্রবর্তী : চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারী) দেশীয় বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ২ হাজার ৭৫৬ কোটি (২৭.৫৬ বিলিয়ন) ডলার। এটা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ শতাংশ বেশি আর গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। এ সময়ে মোট রপ্তানী আয়ের ৮৪ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে। খাতটি থেকে প্রবৃদ্ধি থেকে ১৪ দশমিক ৫১। একই সাথে বেড়েছে কৃষি পণ্যের রপ্তানীও। জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে কৃষিপণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৬৪ কোটি ২৭ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৮ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) কর্তৃক প্রকাশিত মাসিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। টানা ছয় মাস ধরে বাড়ছে অর্থনীতির অন্যতম এই সূচক। সবচেয়ে বড় রপ্তানী উৎস তৈরি পোশাক খাতের নিট পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ১হাজার ১৪৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। নিটে লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেড়েছে ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর উভেনে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২০ শতাংশের মতো। কিন্তু দ্বিতীয় মাস অগাস্টেই তা হোঁচট খায়। ওই মাসে গত বছরের অগাস্টের চেয়ে আয় কমে ১২ শতাংশ। এর পরের মাস থেকে তৈরি পোশাকসহ সামগ্রিক রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।
ইপিবি’র রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি থেকে ২ হাজার ৭৫৬ কোটি ২৮ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। গত বছরের এই আট মাসে আয় হয়েছিল দুই হাজার ৪৩৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ৫১ শতাংশ। অর্থাৎ ২৭ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ২৩ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলারই এসেছে এ খাত থেকে। শুধু ফেব্রুয়ারি মাসেই মোট ৩৩৮ কোটি ৩২ লাখ ডলার রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। এই মাসে লক্ষ্য ধরা ছিল ৩১৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে আয় হয়েছিল ৩০৭ কোটি ২১ লাখ ডলার। এ হিসাবে ফেব্রুয়ারি মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। আর পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসভিত্তিক) আয় বেড়েছে ১০ দশমিক ১২ শতাংশ।
পোশাক রপ্তানীর উত্তরোত্তর ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির বিষয়ে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক একটি বড় স্থান দখল করে আছে। বলা যায় বর্তমানে পোশাক খাত থেকেই সর্বোচ্চ আয় হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে বিগত দিনগুলোতে পোশাক খাতের শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা প্রদানসহ মজুরি বৃদ্ধি, কারখানা উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ। কারখানাগুলোর উন্নয়নে পোশাক শিল্প মালিকরা গত কয়েক বছরে অনেক টাকা বিনিয়োগও করেছেন। ৮০ শতাংশের বেশি কারখানায় উন্নত কর্মপরিবেশের (কমপ্লায়েন্স) আওতায় চলে এসেছে। এতে বায়াররাও খুশি। নতুন বাজারগুলোতেও রপ্তানি বাড়াতে আমরা দিন রাত কাজ করে যাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় রপ্তানী আয়ে এই সাফল্য অব্যাহতভাবে চলছে। আশা করছি এ ধারা আরও বাড়বে।
তবে কমেছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতে রপ্তানি আয়। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ কমে আয় হয়েছে ৬৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। একইভাবে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি আয়ও কমেছে। এ খাতে আয় হয়েছে ৭১ কোটি ১২ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ কম। সম্পাদনা : ইকবাল খান