ঢাকায় পুরো প্রাণচাঞ্চল্য ফিরতে আরও লাগতে পারে ৫-৬ দিন
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী ও আনিসুর রহমান তপন: ছুটি শেষ। কিন্তু এখনো কাটেনি ছুটির আমেজ। অফিস-আদালত খুললেও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো খোলেনি। ২০ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে। এ কারণে যারা বৃহস্পতিবার অফিস খোলা থাকার পরও ফিরেননি বাড়ি থেকে, তারা গতকাল থেকে ফিরতে শুরু করেছেন। আজও ফিরবেন। ঢাকায় কর্মব্যস্ততা ফিরতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। আগামী রোববার থেকে ঢাকা ফিরে পাবে চিরচেনা রূপ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গেছেন। তার সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন মন্ত্রিপরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্য, ব্যবসায়ীদের বড় একটি অংশ। এ কারণে তাদের ঘিরে যে কর্মচাঞ্চল্য তাও নেই। এছাড়া ভিআইপিদের চলাচল কম থাকায়ও রাস্তায় যানজট তেমন নেই।
ঈদের সাধারণ ছুটি শেষে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে অফিস খুলেছে। কিন্তু ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর ছুটি থাকার কারণে অনেকেই এখনো বাড়ি থেকে ফিরেননি। অন্যদিকে যারা ফিরে আসেননি তারা টানা নয়দিনের ছুটি কাটান। গতকাল থেকে ঢাকায় মানুষ আসার সংখ্যা বাড়ছে। যারা ঢাকায় বাস করেন, যারা কাজের জন্য ঢাকায় আসেন, তারাও এখনো আসছেন না। বাসস্যান্ড, রেলস্টেশন ও লঞ্চ টার্মিনালে অন্যান্য দিনের চেয়ে ভিড় ছিল বেশি। লঞ্চ টার্মিনালে তুলনামূলকভাবে সকালে ভিড় ছিল অনেক বেশি। ছুটির পরে ব্রোকারেজ হাউসগুলোতেও ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখ করার মতো।
সচিবালয়ে কাজের গতি গত ১৫ সেপ্টেম্বরের তুলানায় বেশি ছিল। মতিঝিল ও দিলকুশা এলাকায় মানুষের ভিড় ছিল।
রোববার সচিবালয় ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৯৫-৯৬ ভাগ উপিস্থতি ছিল। স্বাভাবিক কাজকর্ম চলছে। কিন্তু সচিবালয়ে দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল কম। অন্য সময়ে প্রতিদিন এ সংখ্যা দেড় সহস্রাধিক হলেও গতকাল ছিল তুলনামূলভাবে অনেক কম। রোববার বেলা আড়াইটা পর্যন্ত সচিবালয়ে ৮৬০টি পাস ইস্যু করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সকালে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দুপুরে কেবিনেট সচিবের রুমে সব বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে উপস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। জনপ্রশাসন সচিব ঈদের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। দেশে ফিরে আজই প্রথম অফিস করলেন। এ কারণে ওই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর সঙ্গেও কর্মকর্তারা ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক থাকার কারণে ঈদে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো ছিল। এ কারণে স্বস্তিতে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিছুসংখ্যক সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য পরিস্থিতি ভালো ছিল। তিনি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও গোয়েন্দাদের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তাদের কারণে কোথাও বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটতে পারেনি বলে জানান। বলেন, নির্বিঘেœ দেশবাসী ঈদ উদযাপন করতে পেরেছে।
সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এছাড়া অন্যান্য মন্ত্রণালয়েও উপস্থিতি ছিল ভালো।
সচিবালয়ের ভিতরে প্রবেশে কড়াকড়ি অব্যাহত আছে আগের মতোই। সবিচবালয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতি থাকলেও তদবিরকারীদের ভিড় তেমন ছিল না।
এদিকে নগরীর বিভিন্ন শপিং মলগুলো খুলতে শুরু করেছে। তা হলেও সেখানে ক্রেতাদের ভিড় ছিল না। দোকানিরা খুললেও বেচা বিক্রি কম। মেট্রো শপিং মলে দেখা গেছে, সেখানে ভিড় নেই। কয়েকটি দোকান ছাড়া সবই খুলেছে। রিচম্যান, নাইউর দোকানগুলো গেটের প্রবেশমুখে হলেও সেখানেও ভিড় কম ছিল।
ফুটপাতের দোকানিরা এখনো সবাই ফেরেনি। কিছু কিছু দোকানি এসেছে। নিউমার্কেট ও গাউছিয়া মার্কেটসংলগ্ন এলাকায় ও বায়তুল মোকাররম মসজিদসংলগ্ন ফুটপাতের কিছু কিছু দোকানি পসরা সাজিয়ে বসেছেন। কিন্তু সেখানে ক্রেতা তেমন নেই।
নগরীর মানুষ পুরোপুরি না আসার কারণে রাস্তাঘাটগুলো ফাঁকা ছিল। যানবাহনের উপস্থিতি ছিল কম। নগরীতে ঢাকার বাইরে থেকে মানুষ ফিরে আসার কারণে কিছু সড়কে যানবাহনের চাপ ছিল। এরমধ্যে গাবতলী বাসস্ট্যান্ড, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড, সায়েদাবাদ টার্মিনাল, সদরঘাট থেকে বের হওয়ার পথে সকালের দিকে যানজট তৈরি হয়। তবে ঈদের আগের দুদিনে মানুষের ঘরে ফেরা নিয়ে যে লড়াই ছিল, এখন ফেরা নিয়ে লড়াই করতে হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর বেশিরভাগ স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। এগুলো খুলবে ২০ সেপ্টেম্বর। কোনো কোনো স্কুল, কলেজ ১৮ সেপ্টেম্বর থেকেই খুলেছে। সেখানে উপস্থিতি কম ছিল। ছাত্র-ছাত্রীরাও একে অপরের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যেও ছিল ঈদের আনন্দ। পশ্চিম ধানমন্ডির একটি স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শতকরা ৫০ ভাগ স্টুডেন্ট উপস্থিত ছিল।
এদিকে কোনো কোনো রুটে ঢাকার বাইরে থেকে যারা ফিরেছেন তাদের বেশিরভাগ যাত্রীকে পথে দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি। ঢাকা ছাড়ার যাত্রী ছিল তুলনামূলকভাবে কম।
ইউনিক বাস সার্ভিসের কাউন্টার ম্যানেজর বলেন, কক্সবাজারসহ অন্যান্য রুটে ঈদের পরও যাত্রী ছিল। এখন যাওয়ার যাত্রী কম, আসছেন বেশি।
অনেক যাত্রীকে শনিবার সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় রওনা দিয়ে আড়াই থেকে ৩ ঘণ্টার পথ আসতে সময় লেগেছে ৫ ঘণ্টা। মির্জাপুরের সড়ক দুর্ঘটনার কারণে ১ ঘণ্টার বেশি সময় জ্যামে আটকে থাকতে হয় যাত্রীদের।
সদরঘাটে নদীপথের ৪০টির বেশি রুটের যাত্রীরা ঢাকায় আসছেন। যাত্রীরা রাতে ভ্রমণ করার কারণে সকালে সদরঘাট টার্মিনালে যাত্রীদের চাপ ছিল বেশি। সেখানে যাত্রী বেশি হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছুটা বেগ পেয়েছেন। ভোর চারটা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত দেড় শতাধিক লঞ্চ আসে। আর ছেড়ে যায় ২০টির বেশি। নৌরুটে ফিরে আসার যাত্রীদের টিকিট পেতে সমস্যা হয়েছে। শনিবার আসার চেষ্টা করে টিকিট না পেয়ে কেউ কেউ রোববার ফিরেছেন।
জানা গেছে, শিডিউল মতে চলাচল করায় ট্রেনযাত্রীদের ভোগান্তি হচ্ছে না। রেলস্টেশনে ট্রেন আসা এবং ছেড়ে যাওয়ার সময় যাত্রীদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। অন্য সময়ের মতো ভিড় ছিল না। রেল কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন সারাদেশে দুইলাখ ষাট হাজার যাত্রী পরিবহন করছে। বাড়ি যাওয়ার পথে যেমনটা ঠাসা ভিড় ছিল এখন ততটা নয়।