১৮৬ কোটি টাকা বকেয়া নিয়ে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে চলছে অচলাবস্থা
শাহীন চৌধুরী : দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া খনি কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ১৮৬ কোটি টাকা বকেয়া পরিশোধ না করায় সেখানে সম্প্রতি ৮ দিন ধর্মঘট পালিত হয়। এর আগে সেখানে কয়লা চুরিসহ নানা জটিলতায় বেশ কিছুদিন কয়লা উত্তোলন বন্ধ থাকে। ফলে বন্ধ হয়ে বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন। কয়লা খনির সমস্যার কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সূত্র জানায়, বড়পুকুরিয়া খনির প্রোডাকশন কাজের জন্য চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়াম খনি কর্তৃপক্ষের কাছে রিটেনশন (জামানত) বাবদ ১৩০ কোটি টাকা এবং যন্ত্রপাতি ক্রয় বাবদ ৫৬ কোটি টাকা সবমিলে ১৮৬ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এই পাওনার জন্য ২০১৭ সালের ১০ দ্বিতীয় দফা চুক্তি হয়। ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী প্রতিমাসের উৎপাদন বিলের ১০ শতাংশ রিটেনশন (জামানত) বাবদ কর্তন করে রাখা হতো। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি বকেয়া পাওনার দাবিতে গত ১ মার্চ থেকে কয়লা উত্তোলন বন্ধ রাখে। আট দিন কয়লা উত্তোলন বন্ধ থাকার পর গত ৮ মার্চ রাত থেকে পুনরায় কয়লা উত্তোলন শুরু করে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএমসি-এক্সএমসি কনসোর্টিয়াম।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি পেট্রোবাংলার একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান এবং গত অর্থবছরে ৪০০ কোটি টাকার উপরে মুনাফা করেছে। এরপরও কেন ঠিকাদারের পাওনা যথা সময়ে পরিশোধ করা হয় না? বারবার কয়লা উত্তোলন বন্ধ করা হচ্ছে কার স্বার্থে? খনি পরিচালনা পর্ষদ পরপর চারটি বোর্ড সভায় কী কারণে ঠিকাদারের পাওনা আটকে রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছিল? আট দিন কয়লা উত্তোলন বন্ধ থাকায় যে ক্ষতি হলো এর দায় কে নিবে? তারা সরকারকে এসব বিষয় খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন।
জানা যায়, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুদসহ জামানতের অর্থ ও মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট বাবদ পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানকে আলটিমেটাম দিয়ে ১ মার্চ থেকে নতুন ১৩০৮ নম্বর কোল ফেস থেকে কয়লা উত্তোলন বন্ধ রাখে। সেই সঙ্গে অর্থ সংকটের কারণ দেখিয়ে খনির প্রায় এক হাজার দেশীয় শ্রমিকের ফেব্রুয়ারি মাসের পুরো বেতন দিতে অপারগতা প্রকাশ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে দেখা দেয় জটিলতা।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৯ জুলাই খনির ইয়ার্ড থেকে প্রায় ২৩০ কোটি টাকার এক লাখ ৪৪ হাজার টন কয়লা উধাও হওয়ার ঘটনাটি ধরা পড়ে। কয়লা কেলেঙ্কারির ঘটনায় একটি বিশেষজ্ঞ কারিগরি কমিটিসহ তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরমধ্যে পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মাহবুব সরোয়ারের নেতৃত্বে গঠিত হয় সাত সদস্যের বিশেষজ্ঞ কারিগরি কমিটি। পেট্রোবাংলার পরিচালক (মাইন অপারেশন) কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে গঠিত হয় আরেকটি কমিটি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন-ডিজি) খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি এরইমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান বলেন, গত ৭ মার্চ কয়লা খনির বোর্ড সভায় ঠিকাদারের বকেয়া পাওনা পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়। দু-তিন দিনের মধ্যে মোট পাওনার এক-তৃতীয়াংশ দেওয়া হবে। অবশিষ্ট টাকাও খুব শিগগির পরিশোধ করা হবে। বিষয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়ামকে জানানো হলে ৮ মার্চ রাত থেকে তারা পরীক্ষামূলকভাবে কয়লা উৎপাদন শুরু করে। সম্পাদনা : ইকবাল খান