২০১৮ সালে ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে খেলাপি বেড়েছে ৪৪টির
রমজান আলী : আইন থাকলেও এর যথাযথ প্রয়োগ নেই ব্যাংকিং খাতে। এর ফলে ক্রমেই বেড়ে চলেছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। পাশাপাশি মূলধন ঘাটতিও বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। দেশের ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ৪৪টি ব্যাংকেই খেলাপি বেড়েছে ২০১৮ সাল শেষে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন এই সমস্যার সমাধান করতে হলে ব্যাংক খাতে সুশাসনের কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। যা ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ছিলো ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি ১১ লাখ টাকা।
সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে দেশে খেলাপি ঋণ বাড়ে ১৯ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। তবে গত সেপ্টেম্বরে প্রান্তিকের তুলনায় খেলাপি ঋণ কিছুটা কমেছে।
২০১৭ সালে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিলো ৫ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা তা বেড়ে ২০১৮ সালে ১৭ হাজার ২২৫ কোটি হয়েছে, ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিলো ২ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা তা বেড়ে ২০১৮ সালে ৩ হাজার ৩১৭ কোটি হয়েছে, ২০১৭ সালে ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিলো ১ হাজার ৬১১ কোটি টাকা তা বেড়ে ২০১৮ সালে ২ হাজার ২১০ কোটি হয়েছে, ২০১৭ সালে ফারমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিলো ৭২৩ কোটি টাকা তা বেড়ে ২০১৮ সালে ৩ হাজার ১৮৪ কোটি হয়েছে।
এছাড়া খেলাপি বেড়েছে, বেসিক ব্যাংকের, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলমেন্ট ব্যাংক, এবি ব্যাংকের, বাংলাদেশ কমার্স, ব্যাংক এশিয়া, ইস্টার্ন ব্যাংকে, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, আইএফআইসি ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, শাহাজালাল ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল, আল আরাফাহ ইসলামী, ইউনিয়ন ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, ব্যাংক আল-ফালাহ, সিটি ব্যাংক এনএ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অফ সিলন, ন্যাশনাল ব্যাংক অফ পাকিস্তান, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড, স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া, সীমান্ত ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, সাউথবাংলা এগ্রিকালচার, সাইথইস্ট ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক।
উল্লেখ, আলোচ্য সময়ে খেলাপি ঋণ নামের অভিশাপ থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পেয়েছে ১৩টি ব্যাংক। ২০১৮ সাল শেষে রাষ্ট্রায়ত্ব খাতের সোনালী ও রুপালী ব্যাংকের খেলাপি কমে এসেছে।
এছাড়া ৭টি বেসরকারি ব্যাংক, ৩টি বিদেশি ব্যাংক ও একটি বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপি কমেছে এ বছর। ব্যাংকগুলো হলো ব্রাক ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, হাবিব ব্যাংক, হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংক (এইচএসবিসি), উরি ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক।
এবিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ঋণ দেয়া ও আদায়ের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব কুঋণ বৃদ্ধিতে সহযোগী ভূমিকা পালন করে। এটা বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য বেশ উদ্বেগজনক। এ সমস্যা সমাধানে ব্যাংকিং খাতে রাজনৈতিক প্রভাব হ্রাস, সুশাসন ফিরিয়ে আনা ও আইনী জটিলতা নিরসন করা উচিত। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান