বিনিয়োগ শিক্ষায় তলানিতে বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরা
আবুল বাশার
বিনিয়োগ শিক্ষা বিনিয়োগকারীর ব্যক্তিগত মনোভাব পরিবর্তনের মাধ্যমে জ্ঞানের ভিত্তিতে দায়িত্বশীল আর্থিক সিদ্ধাস্ত গ্রহণে সাহায্য করে। পুঁজিবাজারে অর্থ বিনিয়োগ-সংক্রাস্ত ধারণা অর্জনের মাধ্যমে সঠিক বিনিয়োগ সিদ্ধাস্ত গ্রহণের জন্য বিনিয়োগ শিক্ষা অপরিহার্য। কিন্তু বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা এই শিক্ষায় অনেক পিছিয়ে রয়েছেন। যারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছেন, তাদের মাত্র ১৯ শতাংশের বিনিয়োগ শিক্ষা রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি-সম্পন্ন বিনিয়োগকারীর হিসাবে এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এ ধরনের বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ২৪ শতাংশ। শ্রীলঙ্কাতে ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি-সম্পন্ন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ৩৫ শতাংশ। পাকিস্তানে এ সংখ্যা ৪০ শতাংশের কাছাকাছি। আমেরিকা ও চীনের পুঁজিবাজারে ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি-সম্পন্ন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ৮০ শতাংশের ওপরে।
এদিকে বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি-সম্পন্ন করে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এজন্য তারা দেশব্যাপী কার্যক্রম চালাচ্ছে, কারণ ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি না থাকলে, অর্থাৎ পুঁজিবাজার সম্পর্কে না জেনে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হন বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে বাংলাদেশের অধিকাংশ বিনিয়োগকারীই না জেনে না বুঝে অন্যের কথা শুনে বিনিয়োগ করেন। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলেন, এই ব্যবসায় আসার আগে অবশ্যই জেনে-বুঝে আসবেন। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার আগে ভাবা উচিত আপনি এই বাজার সম্পর্কে কতটা জানেন। এর জন্য বিনিয়োগ শিক্ষার বিকল্প নেই। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতি ও পুঁজিবাজার একসঙ্গে গাঁথা। পুঁজিবাজার অর্থনীতির প্রাণস্পন্দন। এখানে বিনিয়োগকারীদের গুরুত্ব অপরিসীম। তাদের ছাড়া অর্থনীতির চাকা ঘুরবে না। তাই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের সচেতন হতে হবে। এরজন্য দরকার বিনিয়োগ শিক্ষা।
বিনিয়োগ শিক্ষা কী: বিনিয়োগ শিক্ষা বা ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি হচ্ছে অর্থ ও এর ব্যবহার, আয় ও সঞ্চয়ের ব্যবস্থাপনা এবং ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা ব্যবসার বিনিয়োগ পরিকল্পনা-সংক্রাস্ত সাধারণ জ্ঞান। বিভিন্ন পণ্যের সুবিধা, অসুবিধা ও সম্ভাব্য আয় ঝুঁকি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা অর্জন করে নিজস্ব সামর্থ্যরে সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিনিয়োগ সিদ্ধাস্ত গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান আহরণই হচ্ছে বিনিয়োগ শিক্ষা। বিনিয়োগ শিক্ষা না থাকলে তারা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। আর্থিক অনিয়ম ও প্রলোভন থেকে সুরক্ষিত থেকে নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ অর্জনের জন্য বিনিয়োগ শিক্ষা অপরিহার্য। বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তির সঞ্চয় প্রবণতা বৃদ্ধি পায়, যা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
অন্যদিকে যে কোনো দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার জন্য বিনিয়োগ শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে বিনিয়োগ শিক্ষা না থাকার কারণেই বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালের বড় ধরনের ধস নেমে আসে। আগামীতে যাতে এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি না হতে হয়, সেজন্য বিনিয়োগ শিক্ষা জরুরি।
একই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, আমাদের প্রধান দায়িত্ব (ম্যান্ডেড) হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগকে সুরক্ষা দেওয়া। আপনারা যারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সেভিংস করেন, তারা পুঁজিবাজারে আসেন। আপনাদের সুরক্ষা দেওয়াই আমাদের দায়িত্ব। বিনিয়োগ সুরক্ষার প্রধান উপায় হলো বিনিয়োগ শিক্ষা। সর্বোচ্চ রিটার্ন পাওয়ার জন্য বিনিয়োগ শিক্ষার দরকার। কারণ এর মাধ্যমে যার কাছে যেটুকু সম্পদ আছে, তা সচেতনভাবে বিনিয়োগ করা সম্ভব হয়। এই জ্ঞাননির্ভর বিনিয়োগকে সুরক্ষা দেওয়া যায়, ঝুঁকি কমে এবং লাভের সম্ভাবনা বেশি তৈরি হয়। (শেয়ারবিজ থেকে)