অগ্রিম আয়কর সমন্বয়ে জটিলতায় শিল্প প্রতিষ্ঠান
আবুল বাশার
পণ্য রফতানি ও মূলধনি যন্ত্রপাতি, মৌলিক কাঁচামাল, মধ্যবর্তী কাঁচামাল ও উপকরণের আমদানিতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অগ্রিম আয়কর নেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। নির্দিষ্ট সময়ের পর তা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের হিসাবের সঙ্গে সমন্বয় কিংবা ফেরত দেওয়া হয়। কিন্তু আইনে এ সময়টি নির্দিষ্ট না থাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পাওনা ফিরে পেতে ভোগান্তির শিকার হয়। এতে চলতি মূলধনের সংকটসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়, যা কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এনবিআরের সূত্রমতে, বর্তমান কর ব্যবস্থা ‘আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪’-এর মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এ অধ্যাদেশ অনুসারে কোম্পানিগুলো রফতানি ও মূলধনি যন্ত্রপাতি, মৌলিক কাঁচামাল, মধ্যবর্তী কাঁচামাল ও উপকরণের আমদানিতে অগ্রিম আয়কর হিসেবে পাঁচ শতাংশ আয়কর নিয়ে থাকে। আর্থিক বছর শেষে বা নির্দিষ্ট সময়ের পর তা প্রকৃত করের সঙ্গে সমন্বয়ের বিধান রয়েছে। এতে অগ্রিম আয়কর অতিরিক্ত পরিশোধ করা হলে তা ফেরত প্রদান করতে হয়। কিন্তু আইনে এ সময়টি নির্দিষ্ট না থাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পাওনা ফিরে পেতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এতে চলতি মূলধনের সংকটসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়েন ব্যবসায়ীরা।
আয়কর অধ্যাদেশ জটিল ও যুগের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে অনেক আগে থেকে সরকারকে পরামর্শ দিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এজন্য নতুন আয়কর আইন প্রণয়নের পরিকল্পনা করা হলেও কবে চূড়ান্তভাবে কার্যকর হবে, তা নিশ্চিত নয়। আর ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোও অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারে বারবার দাবি জানালেও তা কার্যকর হয়নি।
দেশের ইস্পাত খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম। গ্রুপটির একাধিক প্রতিষ্ঠান রফতানি ও মূলধনি যন্ত্রপাতি, মৌলিক কাঁচামাল, মধ্যবর্তী কাঁচামাল ও উপকরণের আমদানিতে অগ্রিম আয়কর হিসেবে গত জানুয়ারি পর্যন্ত ২৮০ কোটি টাকা প্রদান করেছে। এর মধ্যে কাস্টমস, ভ্যাট, কর কমিশনারেট আপিলের ১৭২ কোটি টাকা ফেরত প্রদানে নির্দেশ প্রদান করে। তবে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। শুধু একটি কোম্পানি নয়, এ ধরনের বড় ও ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোরও একই অবস্থা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রামে ইস্পাত ও সিমেন্ট শিল্পমালিকরা বলেন, অগ্রিম আয়কর এখন পরোক্ষ করে রূপান্তরিত হয়ে উদ্যোক্তাদের চলতি মূলধনে সংকট সৃষ্টি করছে। এতে ব্যবসা সচল রাখার জন্য বিকল্প উৎস থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করতে হচ্ছে। ফলে ব্যবসা করার ব্যয় কয়েক গুণ বাড়ছে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি বাড়ে, যা ভোক্তাসাধারণ, সার্বিক শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক স্বার্থের পরিপন্থি। একই ধরনের বক্তব্য বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি ও বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির ব্যবসায়ীদের। অগ্রিম আয়কর নিয়ে প্রায় সব বড় ও বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ঝামেলায় আছে। আয়কর অধ্যাদেশে নির্দিষ্ট সময়ে অগ্রিম আয়কর সমন্বয় কিংবা ফেরতের নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ না থাকায় ব্যবসায়ীরা নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
এনবিআর এটা সর্বোচ্চ দুই বছর ধরে রাখতে পারে, কিন্তু এভাবে বছরের পর বছর কেন ধরে রাখবে? এনবিআরের পাওনা হলে তা আদায়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা বা আইন আছে; আর ব্যবসায়ীরা পেলে তখন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই, বা অনুসরণ করা হয় না। এক দেশে দুই নীতি হতে পারে না। এছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস কমানোর জন্য এনবিআরকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।