২০২৮ সালে ভারত হবে বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ অর্থনীতিবিশ্ব বিত্ত অভিবাসন তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই
মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে
২০২৮ সালেই জার্মানি এবং ব্রিটেনকে ছাড়িয়ে পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি হতে যাচ্ছে ভারত। আগামী দশ বছরে ভারতের জাতীয় উৎপাদন ৮,১৪৮ বিলিয়ন ডলার (৫ কোটি ৬৭ লক্ষ কোটি টাকা) থেকে বেড়ে ২২,৮১৪ বিলিয়ন ডলার (১৫ কোটি ৮৮ লক্ষ কোটি টাকা) হবে, এমনটাই লক্ষ্যমাত্রা ভারতের। গত এক বছরে মোট উৎপাদন কমলেও এই মুহূর্তে পৃথিবীর ষষ্ঠ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত। এই তথ্য দিয়েছে মাত্র ৪ দিন আগে ২০১৯ সালের জন্য আফ্রো-এশিয়া ব্যাংক এবং নিউ ওয়ার্ল্ড ওয়েল্থ-এর যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত ‘গেøাবাল ওয়েল্থ মাইগ্রেশন রিভিউ রিপোর্ট’ বা ‘বিশ্ব বিত্ত অভিবাসন পর্যালোচনা প্রতিবেদন’ নামের একটি গবেষণাপত্র; যদিও সেখানে বাংলাদেশের কোনো অস্তিত্ব নেই।
ওই রিপোর্টটি গত ১০ বছরে বিশ্বের সম্পদ বা বিত্তের গতিধারা পর্যালোচনা করেছে। সেক্ষেত্রে ‘এইচএনডবিøউআই’ অর্থাৎ হাই নেটওয়ার্থ ইন্ডিভিজুয়াল বা সর্বোচ্চ প্রকৃত বিত্তের অধিকারীকে ‘বিলিয়নিয়ারি’, ‘সেন্টি-মিলিয়নিয়ারি’, ‘মাল্টি-মিলিয়নিয়ারি’, ‘মিলিয়নিয়ারি’ ও ‘মাস্ অ্যাফলুয়েন্ট’ বলেছে। যাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির পরিমাণ এক মিলিয়ন ডলার বা ভারতীয় মুদ্রায় ৭ কোটি টাকা, তারাই বিত্তশালী বা ধনকুবের। সারা পৃথিবীতে এ ধরনের বিত্তশালীদের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। তাদের মাঝে ভারতীয় রয়েছেন তিন লক্ষ ২৭ হাজার। বিত্তশালীদের সংখ্যার নিরিখে এখন নয় নম্বরে ভারত। তাতে বলেছে, ভারতের মোট উৎপাদন বাড়লেও একই সঙ্গে বাড়ছে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য। অর্থাৎ বিত্তশালীদের সংখ্যা বাড়লেও দেদারছে গরিব হচ্ছেন অর্থনীতির নিচের তলার মানুষ। তারপরও দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে যাচ্ছেন ভারতীয় বিত্তশালীরা। শুধু ২০১৮ সালেই ভারত ছেড়েছেন অন্তত ৫,০০০ ভারতীয় ধনকুবের। সারা পৃথিবীতে দেশত্যাগী ধনকুবেরদের তালিকায় চীন আর রাশিয়ার পরেই এখন ভারত। যে কারণে ভারতীয় বিত্তবানরা দেশ ছাড়ছেন, তার অন্যতম কারণ হচ্ছে নিরাপত্তা। নিরাপত্তাহীনতার জন্যই তারা দেশে থাকা আর সঠিক মনে করছেন না, এমনটাই বলেছে রিপোর্টটি। আর নিরাপত্তার বিষয়ে মহিলা ও শিশুদের নিরাপত্তা, জলবায়ু, পরিবেশ, সন্তানের শিক্ষা পরিকাঠামো, কাজের পরিবেশ, আর্থিক দুশ্চিন্তা, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, জীবনযাত্রার মান ও ধর্মীয় উত্তেজনা অধিকতর গুরুত্ব পেয়েছে।
তথাপি সদ্য প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের ৪৮ শতাংশ সম্পত্তিই সাড়ে তিন লাখ মানুষের হাতে। বাকি ৫২ শতাংশ সম্পত্তি রয়েছে প্রায় ১৩০ কোটি মানুষের কাছে। তাই বিত্তবানরা দেশ ত্যাগের সঙ্গে তাদেও সম্পত্তিও স্থানান্তরিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। একমাত্র দেশের অর্থনীতি ও সমাজকে নিরাপদ করলেই বিত্তশালীদের দেশ ছাড়ার সংখ্যা কমতে পারে বলে বলা হয়েছে গবেষণাপত্রটিতে। তবুও ভারতীয় অর্থনীতির জন্য আশার কথা রয়েছে ওই রিপোর্টে। সেক্ষেত্রে বলা হয়েছে, এখন যত ধনকুবের ভারত ছাড়ছেন, তার চেয়ে বেশি সংখ্যায় ধনকুবের তৈরিও হচ্ছে দেশটিতে। তাই স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে পুনরায় দেশেই সম্পদের পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব।
এক্ষেত্রে সম্ভাব্য যে সব দেশ চীন, রাশিয়া ও ভারতের বিত্তবানদের আকৃষ্ট করছে, তারা হচ্ছেÑ অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ক্যারিবিয়ান, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ইসরাইল, পর্তুগাল, গ্রিস ও স্পেন। আর সম্পদ বা বিত্তের বিবেচনায় বিলিয়ন ডলারে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশ হচ্ছে, যথাক্রমেÑযুক্তরাষ্ট্র (৬০,৭০৭), চীন (২৩,৫৬৩), জাপান (১৯,১৩১), যুক্তরাজ্য (৯,১২৫), জার্মানি (৮,৭৯০), ভারত (৮,১৪৮), অস্ট্রেলিয়া (৬,০২০), কানাডা (৬,০০৯), ফ্রান্স (৫,৮৫১) ও ইতালি (৩,৮৪৯)। পাশাপাশি যে ২০টি দেশ গত ১০ বছরে বিত্তের ক্রমবিকাশে শীর্ষে রয়েছে, তারা হচ্ছেÑচীন (১৩০%), মরিশাস (১২৪%), ইথিওপিয়া (১০২%), ভারত (৯৬%), শ্রীলঙ্কা (৯৪%), ভিয়েতনাম (৯৪%), ইন্দোনেশিয়া (৭১%), কেনিয়া (৬৪%), ফিলিপাইন (৬৪%), দক্ষিণ কোরিয়া (৬৩%), পেরু (৫৮%), থাইল্যান্ড (৫৭%), নিউজিল্যান্ড (৫২%), ঘানা (৫১%), হংকং (৫০%), চিলি (৫০%), সিঙ্গাপুর (৫০%), অস্ট্রেলিয়া (৪৮%), বতজোয়ানা (৪৬%) ও ইসরাইল (৪৫%)। আর যে ২০টি দেশ বিশ্বে বিত্তে গত ১০ বছরে পর্যায়ক্রমে অধঃগতিতে শীর্ষে রয়েছে, তারা হচ্ছেÑভেনেজুয়েলা (-৬৮%), গ্রিস (-৩৭%), ইউক্রেন (-২৪%), সাইপ্রাস (-২১%), ইতালি (-১৪%), স্পেন (-১৩%), তুর¯ক (-১১%), মিশর (-১০%), রাশিয়া (-১০%), পর্তুগাল (-৮%), ফ্রান্স (-৭%), নেদারল্যান্ড (-৭%), লেবানন (-৭%), ক্রোশিয়া (-৬%), নরওয়ে (-৬%), নাইজেরিয়া (-৪%), ইরান (-৪%), বেলজিয়াম (-৩%), ফিনল্যান্ড (-৩%) ও ডেনমার্ক (-৩%)।
ই-মেইল: [email protected]