মোদী সরকারের সহায়তায় ভারত জুড়ে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে আদানি পাওয়ার
নূর মাজিদ : নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকারের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক গোষ্ঠীগুলোর সখ্যতার খবর বহু পুরোনো। এই কারণেই দেশটির কর্পোরেট গণমাধ্যমে বিজেপির পক্ষে প্রচারের ধারাটিও বেশ শক্তিশালী। চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে একটি বহুল প্রচারিত অনলাইন গণমাধ্যম, দেশটির জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম বৃহৎ কো¤পানি আদানি পাওয়ারের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর সরকারের সখ্যতার খবর প্রকাশ করে। সূত্র : স্ক্রলডটইন
প্রতিবেদনে প্রকাশ, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত মোদী সরকার গ্যাস পাইপলাইন এবং ফুয়েল স্টেশন স্থাপন ও পরিচালনায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ১২৬টি চুক্তি করে। সরকারের কাছ থেকে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে এই সময় সবচাইতে বেশি এগিয়ে ছিলো গুজরাটভিত্তিক আদানি পাওয়ার। তারা মোট ২৫টি বড় আকারের পাইপলাইন এবং ফুয়েল স্টেশন স্থাপনে সরকারি অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে স¤পূর্ণ নিজস্ব প্রকল্প হিসেবে অনুমোদন পেয়েছে ১৫টি এবং বাকি ১০টিতে অন্যান্য কো¤পানির সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে তারা কাজ করবে। এই সকল কো¤পানির মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি কো¤পানি ইন্ডিয়ান ওয়েল কর্পোরেশনও রয়েছে।
এই চুক্তিগুলো তিনটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, এই দুই মাসে সরকার যেসব চুক্তি করেছে তার আর্থিক মূল্য পূর্ববর্তী ৯ বছরে করা চুক্তিগুলোর আর্থিকমূল্য থেকে অনেক বেশি। যার আওতায় পড়ে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের করা ৩৫টি এবং বিজেপির শাসনামলের ৬৩টি চুক্তি। দ্বিতীয়ত, সরকার গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের স¤পূর্ণ কাঠামো এবং সংযোগের প্রাথমিক পরিকল্পনা করেই এসব প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। এখনো এর আওতায় থাকা অনেক শহর বা জেলায় গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের কাজই শুরু হয়নি। মার্চ নাগাদ ভারতে শুধুমাত্র ১৭ হাজার ৭৫৩ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ শেষ করতে পেরেছে। এখনো বাকি আরো ১৩ হাজার কিলোমিটার। এর আগেই সরকার তড়িঘড়ি করে এসব চুক্তি করে, যাতে বেসরকারি জ্বালানি কো¤পানিগুলো ব্যাপক মুনাফার মুখ দেখবে।
তৃতীয়ত, এই সকল চুক্তি স্বাক্ষরের সময় মোদী সরকার, প্রথম পাঁচবছরে বেসরকারি কো¤পানিগুলো কতগুলি আবাসিক এলাকা এবং যানবাহনে জ্বালানি সরবরাহ করবে তার প্রাথমিক অনুমান করেই চুক্তিমূল্য নির্ধারণ করে। এতে কোন স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি বলেই অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও, নির্ধারণ করা হয়নি ভোক্তাদের ঠিক কত টাকায় গ্যাস কিনতে হবে। অর্থাৎ, আদানি পাওয়ারের জন্য ভারতীয় ভোক্তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থাদায়ের সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়েছে, খোদ সরকারের পক্ষ থেকেই।
সরকারের সঙ্গে এসকল মুনাফাজনক চুক্তির কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে গৌতম আদানির নেতৃত্বাধীন আদানি পাওয়ার ভারতজুড়ে তাদের ব্যবসায়িক পরিধি বিস্তারে বাড়তি সুবিধা পেয়েছে। যেমন, গতবছর তারা মুম্বাইয়ে রিলায়েন্স পাওয়ারের বৈদ্যুতিক সংযোগের পরিচালনা স্বত্ব কিনে নেয়। ছত্তিসগড়ে কিনে নেয় জিএমআরের তাপভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এছাড়াও, চেন্নাইয়ে কাটুপল্লি বন্দরের লারসেন এবং টাবুরো পরিচালিত বৈদ্যুতিক সংযোগের ব্যবসাও তারা অধিগ্রহণ করে। এর বাহিরে ভারতজুড়ে আরো অসংখ্য অধিগ্রহণ চুক্তি করেছে আদানি পাওয়ার। যা কো¤পানিটির বাণিজ্যিক কাঠামোকে সুবিশাল স্তরে পৌঁছে দিচ্ছে।