২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন
সোহেল রহমান : আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে মোট প্রকল্পের সংখ্যা হচ্ছে ১ হাজার ৪৭৫টি। এটি চলতি অর্থবছরের মূল এডিপি’র আকার থেকে ১৭ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং সংশোধিত এডিপি থেকে ২১ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে মূল এডিপি’র আকার ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা এবং সংশোধিত এডিপি’র আকার হচ্ছে ১ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)-এর বৈঠকে এই নতুন এডিপি অনুমোদন দেয়া হয়। এনইসি চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান এক প্রেস ব্রিফিং-এ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এবার রেকর্ড আকারের এডিপি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কারণ এবারই প্রথম এডিপি’র আকার দুই লাখ কোটি টাকা ছাড়ালো। এবারের এডিপি-তে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে (স্বায়ত্বশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ছাড়া) ১ লাখ ৩০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান/কর্পোরেশনের নিজস্ব উন্নয়ন প্রকল্পের সংখ্যা হচ্ছে ৮৯টি এবং এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব অর্থায়নের পরিমাণ ৭ হাজার ৮২ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ সহায়তা প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৫ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে প্রকল্প সংখ্যা ও এডিপি’র আকার দাঁড়াচ্ছে যথাক্রমে ১ হাজার ৫৬৪টি এবং ২ লাখ ১৫ হাজার ১১৪ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু ও পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় এবার পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ ৫২ হাজার ৮০৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এটি মোট এডিপি’র ২৬ দশমিক ০৫ শতাংশ। অন্যান্যের মধ্যে অগ্রাধিকার খাত বিবেচনায় বিদ্যুৎ খাতে ২৬ হাজার ১৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা (এডিপি’র ১২ দশমিক ৮৩ শতাংশ), ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণ খাতে ২৪ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা (এডিপি’র ১২ শতাংশ), শিক্ষা ও ধর্ম খাতে ২১ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা (এডিপির ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ), বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ১৭ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা (এডিপি’র ৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ), পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে ১৫ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা (এডিপি’র ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ), বরাদ্দ ধরা হয়েছে। স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ১৩ হাজার ৫৫ কোটি টাকা (এডিপি’র ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ), কৃষি খাতে ৭ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা (এডিপি’র ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ), নদী ভাঙ্গন রোধ ও নদী ব্যবস্থাপনার জন্য পানি সম্পদ খাতে ৫ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা (এডিপি’র ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ) এবং জনপ্রশাসন খাতে ৫ হাজার ২৪ কোটি টাকা (২ দশমিক ৪৮ শতাংশ) বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী এডিপি অনুমোদন দিয়েছেন ঠিকই, এটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে জাতীয় সংসদ।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবার এডিপি বরাদ্দের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলোর চাহিদার প্রায় ৯০ ভাগ পূরণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এবার এডিপি-তে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মোট চাহিদার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫৩ হাজার ২১ কোটি টাকা।
এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম দশ (জুলাই ২০১৮-এপ্রিল ২০১৯) মাসে ৫৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে বলে পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান। আলোচ্য সময়ে টাকার অঙ্কে এডিপি ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৭ হাজার ৩০ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৫২ দশমিক ৪২ শতাংশ। অর্থাৎ এবার আলোচ্য সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার বেড়েছে ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।
গতকালের এনইসি বৈঠকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের এডিপি ছাড়াও বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত ১ হাজার ৪৬টি নতুন প্রকল্প, বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থ প্রাপ্তির সুবিধার্থে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত ২৪২টি প্রকল্প, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি)-এর আওতায় ৬২টি প্রকল্প, চলতি বছরের জুনে মেয়াদোত্তীর্ণ ২৭২টি প্রকল্প, চলতি অর্থবছরে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত এমন প্রকল্প ২০১৯-২০ অর্থবছরের এডিপি-তে পুনঃঅন্তর্ভূক্তির জন্য ৫৮টি প্রকল্প এবং আগামী বছরের জুনের মধ্যে সম্ভাব্য সমাপ্য ৩৫৫টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সম্পাদনা : ইকবাল খান