ভারতে আরও একবার, ‘নরেন্দ্র মোদী’ সরকার
আসিফুজ্জামান পৃথিল : ভারতে আবারও সরকার গঠন করছে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপি। ইন্দিরার রেকর্ড স্পর্শ করে টানা দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী গিসেবে দ্বায়িত্বগ্রহণ করবেন নরেন্দ্র মোদী। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিজেপি ২৯৮ আসনে বিজয় নিশ্চিত করেছে। সরকার গঠন করতে লোকসভায় প্রয়োজন হয় ২৭২ আসন। আর বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট জয় পেয়েছে ৩৫১ আসনে।
হেরে গেলেও কংগ্রেস এবং ইউপিএ’র আসন বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ বেসরকারি ফল অনুযায়ী কংগ্রেস জয় পেয়েছে বা জয়ের পথে রয়েছে ৫৩ আসনে। যা আগের চেয়ে বেশি। তাদের জোট ইউপিএ পেয়েছে বা পেতে যাচ্ছে ৯২ আসন। তৃণমূল পেয়েছে ২২টি। তারা হারিয়েছে ১২টি আসন। এই জয়ের সঙ্গে সঙ্গেই ইতিহাসে ঢুকে পড়েছেন মোদী। ভারতের ইতিহাসে মোদীই হতে চলেছেন তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী, যিনি পর পর দু’বার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী হলেন। অর্থাৎ কোনও জোট বা শরিক দলের সাহায্য ছাড়াই সরকার গঠনের প্রয়োজনীয় আসন পেয়েছে দল। এর আগে জওহরলাল নেহরু পর পর তিন বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন কংগ্রেসের হয়ে। ১৯৬৭ এবং ১৯৭২ সালে পর পর দু’বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। এই দুইবারও একাই ম্যাজিক ফিগার পেরিয়ে গিয়েছিল কংগ্রেস। শুধু হিন্দি বেল্ট নয়, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার-উড়িশ্যা, এমনকি উত্তর-পূর্ব সব জায়গায় এবার ছড়িয়েছে গেরুয়া রঙ। একক ভাবে বিজেপি আগের বারের ২৮২ আসন পার করে ফেলেছে। ৩০০ আসন পার করেছে এনডিএ জোট। উল্টো দিকে বিরোধী শিবিরে শুধুই হতাশা। ভোট গণনার প্রবণতায় স্পষ্ট ইঙ্গিত, কংগ্রেসের আসন সংখ্যা বাড়লেও সরকার গঠনের ধারে-কাছে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই ইউপিএ জোটের। চন্দ্রবাবু নাইডু, মমতা ব্যানার্জি, অখিলেশ যাদব, মায়াবতী আলাদা করে জোট গঠনের জন্য যথেষ্ঠ খেটেছেন। কিন্তু স্বীয় রাজ্যেই তাদের অবস্থা ভয়াবহ। পশ্চিমবঙ্গে এক ধাক্কায় আসন বেড়ে গেছে বিজেপির। উত্তরপ্রদেশেও বিজেপি ৫০টির কাছাকাছি আসন পেতে পারে বলে সকালেই ধারণা পাওয়া গেছে।
বিরোধীদের কাছে কার্যত তুরুপের তাস ছিল উত্তরপ্রদেশ। কারণ, আসন সংখ্যার দিক দিয়ে ভারতে সবচেয়ে বড় এই রাজ্যে দীর্ঘ দিন বাদে দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি বহুজন সমাজ পার্টি এবং সমাজবাদী পার্টি এক হয়ে লড়াই করেছে। সঙ্গে ছিল অজিত সিং-এর আরএলডি-ও। কিন্তু তাতেও ফল আশানুরূপ নয়। বিরোধী মহাজোটের নেতৃত্ব দেওয়া চন্দ্রবাবু নাইডু নিজের রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশেই বাজে অবস্থায় পড়েছেন। রাজ্যটিতে একটি আসনেও জেতেনি তার দল। ২৪ আসনে জয়ী জগমোহন রেড্ডির দল। বিরোধী জোটের অন্যতম মুখ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ রাজ্যে ব্যাপক আসন কমছে তৃণমূলের। সেই জায়গায় উঠে আসছে বিজেপি। বিজেপি ১৯ আসন পাবে বলে বেসরকারী ফলাফল বলছে।
কয়েক মাস আগেই মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তীসগড়ের বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে সরিয়ে ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস। বিরোধী দলগুলোর আশা ছিল, এই তিন রাজ্যে বিজেপির ফল ব্যাপক খারাপ হবে। কিন্তু তিন রাজ্যে কার্যত ২০১৪ সালের ফলের চেয়ে খুব একটা হেরফের হয়নি। অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে বিহারে বিজেপি-জেডিইউ-আরএলএসপির জোট বড় জয় পেয়েছে। ঝাড়খ-েও প্রায় একই অবস্থা। উত্তর-পূর্বে বিজেপির ফল ভালো ছিলই। সেই প্রবণতা এ বারও বজায় রয়েছে। সম্পাদনা : ইকবাল খান