ইউরেশিয়ান ইকোনমিক কমিশনের সাথে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক বিষয়ে সহযোগিতার পথ উন্মুক্ত হবে
স্বপ্না চক্রবর্তী : বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি ইউরেশিয়ান ইকোনমিক কমিশনের সাথে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিষয়ে স্মারক স্বাক্ষর করেছেন। গত ৩১ মে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে অবস্থিত ইউরেশিয়ান ইকোনমিক কমিশনের সদর দপ্তরে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ইউরেশিয়ান ইকোনমিক কমিশনের পক্ষে স্মারকটি স্বাক্ষর করেন মন্ত্রী পদমর্যাদার কমিশনের বোর্ডের সদস্য তাতিয়ানা ভলোভিয়া। চুক্তি স্বাক্ষরের পর বাণিজ্য মন্ত্রী আশাবাদ ব্যাক্ত করে বলেন, রাশিয়ার বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে।
গতকাল সোমবার বাণিজ্যমন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ইউরেশিয়ান ইকোনোমিক কমিশনের সাথে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরের পাশাপাশি বাণিজ্যমন্ত্রী রাশিয়ার ফেডারেশন অব চেম্বার এন্ড কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি এবং বাংলাদেশ বিজনেসম্যান এ্যাসোসিয়েশনের সাথে সভা করেন। সভায় রাশিয়ায় বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা এবং কৃতকর্ম নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় ইউরেশিয়ান ইকোনমিক কমিশনের সাথে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিষয়ে স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ায় রাশিয়ার ব্যবসায়ীরা সাধুবাদ ব্যক্ত করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে এর ফলে রাশিয়ার বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক বিষয়ে সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরের লক্ষে ইউরেশিয়ান ইকোনমিক কমিশন ২০১৬ সালে একটি খসড়া মেমোরেন্ডাম অফ কো-অপারেশন প্রস্তাব করে। প্রস্তাবিত খসড়ার উপর ব্যবসায়ী সংগঠন এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও সংস্থার মতামত গ্রহণ করে বিভিন্ন পর্যায়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার মাধ্যমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রস্তাবিত খসড়াটি সংশোধন, পরিমার্জন ও সংশোধন করে স্বাক্ষরের লক্ষ্যে চ‚ড়ান্ত করা হয়।
স্বাক্ষরিত সহযোগিতা স্মারক কার্যকর করার লক্ষ্যে অতি দ্রæত উভয় দেশের অংশগ্রহণে একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি সহযোগিতার অগ্রাধিকার মূলক ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করে বাংলাদেশের সাথে ইউরেশিয়ান ইকোনোমিক কমিশনের সদস্য দেশসমূহের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে কাজ করবে।
জানা যায়, পূর্ব ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশ (রাশিয়া, বেলারুশ, কাজাখিস্তান, আরমেনিয়া এবং কিরগিস্থান)-এর সমন্বয়ে ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন গঠিত হয়েছে। যা ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। এর সদস্য দেশসমূহ ভূতপূর্ব সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল এবং বর্তমানে কমনওয়েলথ অফ ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টেটস (সিআইএস) এর সদস্য। ইইইউ এর কার্যক্রম পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ ইউরেশিয়ান ইকোনমিক কমিশন নামে পরিচিত। ইইইউ এর গঠন অনেকটা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এর মতো। ইইইউ এর আওতায় সদস্য দেশসমূহের মধ্যে কাস্টমস ইউনিয়ন গঠিত হওয়ায় এর সদস্য দেশসমূহের মধ্যে কোনো কাস্টমস বর্ডার নেই। ফলে, পণ্য বাধাহীনভাবে কোন প্রকার শুল্ক-কর পরিশোধ ছাড়াই এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াত করতে পারে। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইইইউ এর সকল সদস্য দেশ একই শুল্ক হার এবং অভিন্ন বাণিজ্য নীতি অনুসরণ করে থাকে। এর আওতায় মোট ২ কোটি বর্গ-কিলোমিটার এলাকায় ১৮.২৭ কোটি জনগণ বসবাস করে। এ অঞ্চলের জিডিপি (এউচ) ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মাথাপিছু আয় ২৭ হাজার মার্কিন ডলার। বিশ্বের চাষযোগ্য জমির ১৪ শতাংশ এ এলাকার অন্তর্ভুক্ত। এ অঞ্চলে গম, তুলা, ভুট্টা ইত্যাদি উৎপাদিত হয় এবং ইউরিয়া সার, প্রাকৃতিক গ্যাস, পেট্রোলিয়াম, কেমিক্যালস ও খনিজ-এর অন্যতম প্রধান উৎস। এ অঞ্চলে বিশেষ করে রাশিয়ার বাজারে বাংলাদেশে উৎপাদিত রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, হিমায়িত মাছ, ঔষধ, আলু এবং সবজীর ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে রাশিয়ায় কিছু পরিমাণে তৈরি পোশাক, পাট, হিমায়িত চিংড়ী এবং আলু রপ্তানি হলেও এর পরিমাণ বহুগুণে বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশ দীর্ঘ দিন যাবত রাশিয়ার বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার চেয়ে আসছে। কিন্তু দু’দেশের মধ্যে কোন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি না থাকায় এবং রাশিয়া ইইইউ এর আওতায় গঠিত কাস্টমস ইউনিয়ন এর সদস্য হওয়ায় এককভাবে রাশিয়ার পক্ষে বাংলাদেশকে শুল্ক মুক্ত কোটা মুক্ত সুবিধা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। সুতরাং, রাশিয়াসহ ইইইউ দেশসমূহে বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ করার ক্ষেত্রে এবং বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার পাওয়ার লক্ষে প্রস্তাবিত সহযোগিতা স্মারকটি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। কেননা, এই সহযোগিতা স্মারকের আওতায় একটি ওয়ার্কিং গ্রæপ গঠিত হবে যার মূল ভূমিকা হবে বাংলাদেশ ও ইইইউ এর মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে চিহ্নিত ১৯টি সেক্টরের উন্নয়নে কাজ করা। এর ফলে, রাশিয়াসহ ইইইউ দেশসমূহে বাংলাদেশের রপ্তানি উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। এ ছাড়াও বাণিজ্যমন্ত্রী তার সম্মানে ইউরেশিয়ান ইকোনোমিক কমিশন আয়োজিত নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন।