চলতি অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা দাঁড়াতে পারে, জানালো সিপিডি
সোহেল রহমান : রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় প্রতিবছর বাজেট ঘাটতি দ্রুত বাড়ছে এবং বাজেট বাস্তবায়নের হার কমছে। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা দাঁড়াতে পারে এবং আগামী অর্থবছরেও রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সম্ভাবনা কম। চলতি অর্থবছরে প্রথম নয় মাসে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি পূরণে আগামী ও এর পরের অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ বেড়ে যেতে পারে। এ প্রেক্ষিতে আসন্ন বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একটি কর্মপরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ’ (সিপিডি)।
আসন্ন জাতীয় বাজেটকে সামনে রেখে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর তোপখানা রোডে সিরডাপ মিলনায়তনে ‘জাতীয় অর্থনীতির পর্যালোচনা ও আসন্ন বাজেট প্রসঙ্গ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানায় সিপিডি। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংস্থার সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সিপিডি’র সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এবং গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেন।
সিপিডি’র পর্যালোচনায় বলা হয়, এখানে কর আদায়ের চেয়ে কর ফাঁকির প্রবণতা বেশি। পাশাপাশি কর ছাড় ও নগদ প্রণোদনা প্রদানের ফলে রাজস্ব আহরণে কী পরিমাণ চাপ বাড়ছেÑতা হিসাব করা হয় না। অন্যদিকে করের আওতা বাড়ানোর সুযোগও খুবই সীমিত। চিহ্নিত গোষ্ঠীর কাছ থেকে আয়কর আদায়ের ব্যর্থতা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারার প্রধান কারণ। এছাড়া ভ্যাট আদায়ে নি¤œ প্রবৃদ্ধি ও কর-বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ে নি¤œতর প্রবৃদ্ধিও রয়েছে।
প্রসঙ্গত চলতি অর্থবছরের গত জুলাই-ডিসেম্বর প্রান্তিকে সার্বিক রাজস্ব প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ২ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধির হার ছিলো ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন ও রাজস্ব বোর্ডবহির্র্ভূত রাজস্ব আয় এবং করবহির্ভূত রাজস্ব আয় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে যথাক্রমে ৫৭ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ৫০ দশমিক ১ শতাংশ। এর বিপরীতে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ।
সংস্থার মতে, রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় বাজেট বাস্তবায়নের হারও কমছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাজেট বাস্তবায়নের হার ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ। বাজেট বাস্তবায়নের হার বাড়াতে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পাশাাপাশি সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে অপচয় হ্রাস ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন।
সিপিডি’র মতে, বর্তমানে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি এক ধরনের চাপের মুখে রয়েছে এবং বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্য পরিস্থিতি নেতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। এমতাবস্থায় বাজেটে আর্থিক খাত সংস্কার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠন, পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও বন্ড মার্কেটকে আরও কার্যকর করা প্রয়োজন। এছাড়া বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর ওপরও বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে সংস্থাটি। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান