আবদুল মজিদ বললেন, ব্যাংকিং খাতে অব্যবস্থাপনা সুশাসন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবের ফলাফল হচ্ছে ঋণখেলাপি
আমিরুল ইসলাম : ঋণখেলাপিদের জন্য বড় সুবিধা আসছে, এমন ঘোষণায় তিন মাসেই দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। এর ফলে প্রথমবারের মতো অবলোপনের হিসাব বাদে খেলাপি ঋণ লাখো কোটি টাকা ছাড়ালো। মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেয়ার সময় ২০০৯ সালের শুরুতে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিলো ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। ১০ বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪ গুণ। একদিকে বিশাল অঙ্কের বাজেট, অন্যদিকে টাকাশূন্য ভল্ট। একদিকে ব্যয়ের ব্যাপক আয়োজন, অন্যদিকে টাকার জন্য হাহাকার। এ রকম বিপরীত অবস্থার মধ্য দিয়েই নতুন অর্থবছরের জন্য নতুন বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অনেক সমালোচক মনে করে ব্যাংকিং ব্যবস্থার এ রকম অবস্থার প্রধান কারণ খেলাপি ঋণ। আপনি কি তাই মনে করেন? বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থার কারণ কি এবং কীভাবে এর সমাধান করা যায় জানতে চাইলে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ বলেছেন, ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাব, অব্যবস্থাপনা এবং জবাবদিহিতার অভাব, বিশেষ করে আমানতকারীদের অর্থ নিয়ে পরিচালনা করার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার যে অভাব তার একটা সার্বিক ফলাফল হচ্ছে ঋণখেলাপি।
তিনি বলেন, ঋণখেলাপি থেকেই বোঝা যাচ্ছে ব্যাংকের ভেতরে ঋণ আদান-প্রদানে সুশাসনের ঘাটতি, অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতা রয়েছে। সেজন্য ঋণখেলাপিটা হচ্ছে ইনডিকেটর। এটা আসলে কারণ নয়, এটা হচ্ছে ফলাফল। ঋণখেলাপির জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার খারাপ অবস্থা এমনটা নয়। ঋণখেলাপি স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে, এর কারণ হচ্ছে যে ঋণগুলো দেয়া হয়েছে তা যদি শোধ না করা হয় তাহলে ঋণখেলাপি বাড়বেই। তবে ঋণখেলাপি বেড়ে যাওয়া থেকে এটা বোঝা যায়, ঋণ শোধের ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি নেই। নতুন করে ঋণখেলাপিদের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরো বেড়ে গেছে, এটা তার একটা প্রমাণ। ঋণখেলাপি যেন না বাড়ে তার জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। এর জন্য পদক্ষেপ স্পষ্ট হতে হবে। ঋণখেলাপিদের দেয়া সুযোগগুলো যেমন স্পষ্ট হচ্ছে তেমনি ঋণ সুদ না করলে তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে সেটাও তেমন স্পষ্ট হতে হবে। তা না হলে ঋণখেলাপি কমবে না। ঋণখেলাপি কমানোর জন্য না হলেও আর যেন না বাড়ে তার জন্য যে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে সেটাকে দৃশ্যগত করতে হবে। পদক্ষেপ নেয়ার পর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ না করে, শুধু কিছু সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে মনে হচ্ছে না।