ভূমিধস ও বন্যার ঝুঁকিতে লাখো রোহিঙ্গা
শোভন দত্ত : কক্সবাজারে বসবাসরত লাখ লাখ রোহিঙ্গা এই বর্ষা মৌসুমে ভূমিধস ও বন্যায় ঝুঁকিতে রয়েছে। অবাধে বন কেটে ও পাহাড়ের খাড়া ঢালে ঘর তৈরি না থামায় ঝুঁকি আরও বাড়ছে। ভারী বৃষ্টি শুরু হলে জলাবদ্ধতার কারণে বন্যা এবং পাহাড়ি ঢালের মাটি ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে রোহিঙ্গারা। বাংলা ট্রিবিউন
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য মতে, ১৯৭৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় বছরে গড়ে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। জুনে তা বেড়ে ৮০০ এবং জুলাই মাসে তা ১০০০ মিলিমিটার হয়। এপ্রিল ও মে মাস থেকে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কাও থাকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উখিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে পাহাড় কেটে কেটে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে বসবাস করছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। বছর দেড়েক আগেও যেখানে পর্যটন এলাকা কক্সবাজার ও টেকনাফের আঁকাবাঁকা রাস্তাগুলোর দুই পাশে গাঢ় সবুজ ঘন জঙ্গলসহ পাহাড় ছিল। অবাধে সেসব পাহাড় ও বনের গাছপালা কেটে ঘর তৈরি করে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। যতই দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে ঝুপড়ি ঘরের সংখ্যাও।
উখিয়া কতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের মাঝি (রোহিঙ্গা নেতা) মোহাম্মদ সালে আহমদ বলেন, ‘এবার এখনও সেই রকম ভারী ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়নি। মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। অপেক্ষায় আছি ঘরগুলো যদি এর আগেই আরও শক্ত করে বেঁধে দেয়। বর্ষায় দিনের চেয়ে রাতটা বেশি ভয়ে কাটে। ভারী বর্ষণ হলে নির্ঘুম রাত কাটে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ঘরগুলো খুবই দুর্বল। বাতাস হলেই নড়াচড়া করে। তখন ছেলেমেয়েরা খুব ভয় পায়। সামান্য বৃষ্টিতেও আশ্রয় শিবিরে ভয়াবহ দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। আবার রোদেও কষ্ট কম না। গরমে কুঁড়ে ঘরে হাঁসফাঁস করতে হয়।’
উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা শিবিরের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রফিক বলেন, ‘যারা পাহাড়ের খাড়া ঢালে ঘর তুলেছে তারা বেশি ঝুঁকিতে আছে। ভারী বৃষ্টি হলেই ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। আর যারা নিম্নাঞ্চলে থাকে তাদের বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। বর্ষাকাল যত ঘনিয়ে আসবে রোহিঙ্গাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ততই বাড়ছে। কারণ মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকি থাকে।’
কক্সবাজারের দক্ষিণ বন বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা ৮ হাজার একর জমি দখল করে বসতি গড়ে তুলেছে। যার বেশিরভাগই পাহাড় ও বন কেটে গড়েছে। এসব জায়গায় টানা বৃষ্টিপাত হলে মাটিগুলো সরে যায়। এতে বড় ধরনের ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। পাহাড় ও বন কেটে রোহিঙ্গাদের তৈরি করা বসতিগুলোর মধ্যে বর্ষা মৌসুমে কোনগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ তা সার্ভে করে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’