বরিশালের সন্ধ্যানদীতে লঞ্চডুবিতে ১৪ জনের লাশ উদ্ধার : তদন্ত কমিটি গঠন
শামীম আহমেদ ও রাজু লস্কর, বরিশাল : বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সন্ধ্যানদীতে এমএল ঐশী-২ নামের যাত্রীবাহী একতলা লঞ্চ ডুবে গেছে। এ ঘটনায় ৪ নারী, ২ শিশুসহ ১৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে; এখনও নিখোঁজ প্রায় অর্ধশতাধিক যাত্রী। উপজেলার সৈয়দকাঠী ইউনিয়নের মসজিদবাড়ির দাসের হাট এলাকায় গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে এগারোটায় ভাঙনের কবলে পড়ে লঞ্চটি ডুবে যায় বলে জানান বানারীপাড়া থানার ওসি জিয়াউল আহসান।
থানা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল স্থানীয়দের সহায়তায় ডুবে যাওয়া লঞ্চটিকে বিকাল সাড়ে তিনটায় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে জানান বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শহিদুল ইসলাম। গতকাল বিকাল চারটার দিকে তিনি আরও জানান, লঞ্চটির স্থান শনাক্ত করে লাশ উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে তীব্র স্রোতের কারণে উদ্ধার কাজে সমস্যা হচ্ছে।
লঞ্চডুবির খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি, প্যানেল স্পিকার অ্যাড. তালুকদার মো. ইউনুস এমপি, জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা। কয়েকজন যাত্রী জানান, বানারীপাড়া লঞ্চঘাট থেকে এমএল ঐশী নামের লঞ্চটি পার্শ্ববর্তী উপজেলা উজিরপুরের হাবিবপুরের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে লঞ্চটি সন্ধ্যানদীর ভাঙনকবলিত দাসেরহাট মজিদবাড়ি ঘাটে ভেড়ে। যাত্রী উঠানামার একপর্যায়ে নদীতীরের একটি বিরাট অংশ ভেঙে লঞ্চের উপর পড়লে এটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একদিকে কাত হয়ে তীব্র স্রোতে তলিয়ে যায়।
উদ্ধার হওয়া ১৪ লাশের পরিচয়: নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান উদ্ধার হওয়া ১৪ লাশের পরিচয় দিয়েছেন। তারা হলেনÑ বানারীপাড়ার মজিবর রহমানের স্ত্রী কহিনুর বেগম (৪০), মজিদ মাস্টারের স্ত্রী সালেহা বেগম (৬০), উজিরপুরের কেশবকাঠি এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক (৭৫), বানারীপাড়ার সাঈদ আলীর স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৪৫), প্রয়াত চান্দু মিয়ার স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৪৫), প্রয়াত ইসমাইল মোল্লার ছেলে মুজাম্মেল মোল্লা (৬২), রহিম হাওলাদারের স্ত্রী রেহানা বেগম (৩৫), উজিরপুরের মনীন্দ্রনাথ মল্লিকের ছেলে সুখদেব মল্লিক (৩৫), বানারীপাড়ার আবুল ঘরামীর ছেলে মিলন ঘরামী (৩২), মো. সাগর মীর (১৫), উজিরপুরের সিরাজুল ইসলামের ছেলে জয়নাল হাওলাদার (৫৫), বানারীপাড়ার আবদুল মজিদের স্ত্রী ফিরোজা বেগম (৫৫), উজিরপুরের সিদ্দিকুর রহমানের মেয়ে শিশু শান্তা (৭) ও স্বরূপকাঠির কামাল হোসেনের স্ত্রী হিরা বেগম।
বানারীপাড়া থানার ওসি জিয়াউল আহসান এ রিপোর্ট লেখার সময় গতকাল বিকাল সাড়ে চারটার দিকে বলেন, এখন পর্যন্ত নিখোঁজ ২০ জনের নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি: বরিশালের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. গাজী সাইফুজ্জামান জানান, দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে বরিশালের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনকে প্রধান করে নয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি জানান, নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে সরকারিভাবে। সম্পাদনা : রিকু আমির