মধ্যম আয় থেকে বেরোতে লাতিন আমেরিকার অর্থনৈতিক সংস্কার দরকার
বণিক বার্তা : বিশ্বের নবম বৃহৎ অর্থনীতি ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার মতো লাতিন আমেরিকার বহু দেশ এখনো মধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকে রয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশগুলোর মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সংস্কার জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
‘মধ্যম আয়ের ফাঁদ’ এমন একটি অবস্থা, যেখানে একটি দেশ মাঝারি আয়ের স্তরে পৌঁছার পর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারিয়ে ফেলার কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হতে থাকে।
আরমান্দো আলভারেজ পেনতিয়াদো ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক পাওলো দুত্রা বলেন, ব্রাজিলের অর্থনীতি ‘ব্রাজিলিয়ান মিরাকেল’ ও ‘লাতিন আমেরিকান ট্র্যাপ’ এ দুুয়ের মাঝে ঝুলছে। তিনি আরো বলেন, শিথিল আর্থিক নীতির মাধ্যমে অর্জিত স্বল্পমেয়াদি উচ্চগতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আর্থিক উদ্দীপনা টেকসই হতে পারে না। এ পরিস্থিতি ব্রাজিলের উন্নয়নকে বিপুল ঋণে জর্জরিত করে ফেলেছে। দুত্রা বলেন, ব্রাজিলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নানা ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোনো সংকট দেখা দিলে প্রায়ই আমরা স্বল্প পরিসরের সংস্কার পরিচালনা এবং সরকারি হিসাব সমন্বয় করে থাকি। কিন্তু এতে দেশটি আবারো অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ হারাবে এবং প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হবে। আর এরপরই ব্রাজিল ত্বরিত উন্নয়ন পর্যায় থেকে মন্দার দিকে ধাবিত হবে। ব্রাজিলের ইতিহাসে এ ধরনের চক্র বহুবার ঘটতে দেখা গেছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে লাতিন আমেরিকার বৃহত্তম অর্থনীতিটির সবচেয়ে ঐতিহাসিক প্রবৃদ্ধির পর্যায় ছিল ১৯৬৮ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত। সে সময় দেশটির গড় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১১ শতাংশ। ফলে এ সময়টিকেই ‘ব্রাজিলিয়ান মিরাকেল’ নামে ডাকা হয়। সা¤প্রতিক বছরগুলোয় ব্রাজিল তীব্র মন্দায় ডুবে রয়েছে। দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার হ্রাস পেয়ে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে যথাক্রমে সর্বনি¤œ ঋণাত্মক ৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ঋণাত্মক ৩ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়ায়। তবে পরে প্রবৃদ্ধি ২০১৭ ও ২০১৮ সালে ১ দশমিক ১ শতাংশের মতো বাড়ে বলে বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে। এদিকে চলতি বছরের জন্য ব্রাজিলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস ২ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ দশমিক ৫ শতাংশ করেছে বিশ্বব্যাংক। ফলে লাতিন আমেরিকার বৃহত্তম দেশটি এখনো মধ্যম আয়ের ফাঁদ থেকে মুক্তি পেতে পারেনি। এই মধ্যম আয়ের ফাঁদ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে ব্রাজিলকে অবশ্যই মধ্যম এবং দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার করতে হবে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভিত্তি বলে জানিয়েছেন দুত্রা।
অন্যদিকে আর্জেন্টিনার ক্ষেত্রে, ১৯৭০-এর দশকে মধ্যম আয়ের স্তরে পৌঁছানোর পর দেশটির অর্থনীতি বারবার বিচ্যুতির মুখে পড়েছে।
এ মুহূর্তে দেশটি অন্যান্য সমস্যার পাশাপাশি পেসোর তীব্র অবমূল্যায়নের চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ