টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত হচ্ছে একের পর নিম্নাঞ্চল
মুরাদ হাসান : টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। শুক্রবার কয়েকটি নদীর পানি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগও বেড়েছে।
সুনামগঞ্জ থেকে সাহাবুদ্দিন আহমেদ জানান, জেলায় অব্যাহত ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ৫ দিন টানা বৃষ্টিপাতের কারণে আমন ধানের বীজতলা বিনষ্ট হয়ে গেছে। দুই দফায় অবিরাম বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের তোড়ে পানিতে ভেসে গেছে ৫ উপজেলার প্রায় তিন কোটি টাকার মাছ। গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সরকারি হিসাবে জেলায় প্রায় ১৩ হাজার ১০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নীলফামারী থেকে স্বপ্না আক্তার জানান, টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় তিন হাজার পরিবার। গতকাল সকালে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যারেজের সবকটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।
লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায় প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় নতুন করে দেখা দিয়েছে বন্যা।
নেত্রকোনার দুর্গাপুর থেকে ধনেশ পত্রনবীশ জনান, টানা কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাড়তে শুরু করেছে সোমেশ্বরী নদীর পানি। ভারতের মেঘালয়ে টানা বৃষ্টির কারণে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন।
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, জেলার ধোবাউড়ায় টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নিতাই নদীর তীর ভেঙে উপজেলার ৭ টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে । ফলে শতশত পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। শতাধিক হেক্টর আমনের বীজতলা তলিয়ে হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার বাঘবেড় ইউনিয়নের কিছু অংশেও বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। সরেজমিন পরিদর্শন করে আমাদের অর্থনীতির প্রতিনিধি জাকারিয়া তারেক আরো জানান, এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, অবিরাম বর্ষণ ও উজানের ঢলে নদনদীর পানি বাড়ছে। এতে করে নদ-নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় পানিবন্দিীহয়ে পড়েছে ১০ হাজার মানুষ। ডুবে গেছে হয়েছে নিচু এলাকার বীজতলা, ভুট্টা ও সবজির ক্ষেত।
ফেনী প্রতিনিধি জানান, গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীতে মুহুরী-কহুয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ফুলগাজী ও পরশুরাম অংশে ১২ টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর প্রভাবে প্লাবিত হয়েছে ১৭টি গ্রাম। পানিবন্দি হয়েছেন এখানকার অর্ধলক্ষাধিক মানুষ।
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে শিবালয় উপজেলার তেওতা ইউনিয়ন ও দৌলতপুর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের শতাধিক বাড়িঘর, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ভাঙনের মুখে রয়েছে আরও বহু ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি।
সিলেট প্রতিনিধি জানান, জেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত বেশিরভাগ নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ ও ধলাই এবং গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি ও জাফলং পাথর কোয়ারির সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।