যা ছিল পেনসিলভানিয়ার সেই নীল আলোর রহস্যময় বাড়িতে!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় প্রচুর নারী ও শিশুকে নিজ বাসভবনে আটকে রেখে ধারাবাহিকভাবে যৌন নির্যাতন করার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন এক ব্যক্তি। তার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বিভিন্ন বয়সের ১২ জন নারী ও শিশুকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। সিএনএন
মূলত ওই ব্যক্তির প্রতিবেশি জেন বেটসের টেলিফোন পেয়েই বাড়িটিতে অনুসন্ধান চালায় পুলিশ। বাকস কাউন্টির ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নি ডেভিড হ্যাকলার প্রতিবেশির অভিযোগের ভিত্তিতে ওই বাড়িতে অনুসন্ধান করে পাওয়া নানা কিছুর বর্ণনা করেন গণমাধ্যমকে। তিনি জানান, গোয়েন্দা পুলিশরা বাড়িতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ওই বাড়িতে থাকা শিশুরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পালাতে শুরু করে। কেউ কেউ রান্নাঘরে গিয়ে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করে।
লি কেপলান নামের ৫১ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা জানায়, কেপলানের বাসভবনে পাওয়া নারী ও শিশুদের বয়স ৬ মাস থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত। কেপলানকে ধারাবাহিক যৌন নির্যাতন ও শিশু নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়।
ওই বাড়িতে সাভিলা নামের এক নারী ছিলেন যিনি দাবি করেন, তিনি ও তার স্বামী ড্যানিয়েল তাদের ১৮ বছরের কন্যাটিকে ‘উপহার’ হিসেবে কেপলানকে দান করেছেন। সে সময় মেয়েটির বয়স ছিল ১৪ বছর। এই চার বছরে দুইবার গর্ভধারণ করেছে সেই মেয়েটি।
মেয়েটির বাবা ড্যানিয়েল ও মা স্যাভিলাকেও শিশুর কল্যাণ ও নিরাপত্তা ব্যহত করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। পরিবারের অর্থনৈতিক সংকটের সময় সাহায্য করার প্রতিদানেই নিজ সন্তানকে দান করেছেন বলে দাবি করেন এই দম্পতি। জেন জানান, গত তিন বছর ধরেই বাড়িটি দেখে আসছেন তিনি। বাড়ির পেছনে শিশুদের কাপড় নাড়া থাকতে দেখে তিনি ভাবতেন, বর্তমান যুগে এক বাড়িতে এতগুলো সন্তানসন্ততি থাকা একটু অস্বাভাবিক। বাচ্চাগুলোর মাকে কখনই দেখা না যাওয়াটাও ধীরে ধীরে অস্বাভাবিক লাগতে থাকে তার কাছে। এক পর্যায়ে পুলিশে খবর দেন জেন।
জেন বেটস ছাড়াও অন্যান্য প্রতিবেশিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ওই বাড়িটি সম্পর্কে আরও নানা কিছু জানতে পারে পুলিশ। পুলিশ জানায়, এক প্রতিবেশি জানিয়েছেন কেপলানকে তার কাছেও সবসময়ই অস্বাভাবিক লেগেছে। তার যখনই কেপলানের সঙ্গে দেখা হতো, তিনি দেখতেন কেপলান আবর্জনা পোড়াচ্ছেন।
এদিকে, শহরের এক দোকানের কর্মচারী জানান, কেপলান প্রায়ই মেয়েগুলোকে নিয়ে দোকানে খেতে যেতেন। সে সময় তিনি সুন্দর পোশাকে সুসজ্জিত থাকলেও তার সঙ্গের শিশুগুলোর অবস্থা থাকতো উস্কোখুস্কো, এমনকি তাদের চুলো ঠিকভাবে আঁচড়ানো থাকতো না। তারা কারো সঙ্গে কথা বলতো না অথবা কারো চোখের দিকেও তাকাতো না। অল্পেই ভয় পেয়ে কেপলানের পেছনে গিয়ে লুকাতো সেই মেয়েগুলো।
লি কেপলান দাবি করেন, ‘পৃথিবীর ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে’ই এভাবে লোকচক্ষুর অন্তরালে শিশুগুলোকে বড় করছেন তিনি। প্রতিবেশি জেন জানান, ওই বাড়ি থেকে মাঝে মধ্যে সঙ্গীতের সুর ভেসে আসতেও শুনেছেন তিনি। বাড়ির দরজার মতো বাড়ির পেছন দিকে জ্বলে থাকা আলোর রঙও থাকতো নীল। পুলিশ জানায়, ওই বাড়িতে বাদ্যযন্ত্র ও শিশুশিক্ষার নানা উপকরণও রয়েছে। এদিকে ড্যানিয়েল ও স্যাভিলার আইনজীবী বলেছেন, তার মক্কেল নিরপরাধ। অনিশ্চিত অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘জে কেউ জে কোন সময় গ্রেফতার হতে পারে। তাতে প্রমাণিত হয় না তিনি অপরাধী।’