আমরা কোনো ব্র্যান্ডের বিপক্ষে নই, চাই দেশীয় দুগ্ধশিল্প বিকশিত হোক
মোহাম্মদ রকিব : পাস্তুরিত দুধ নিয়ে গবেষণা করা অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেছেন, ‘আমরা কোনো ব্র্যান্ড বা কোম্পানির বিরুদ্ধে নই। আমরা চাই দেশীয় দুগ্ধশিল্প বিকশিত হোক। বিদেশি দুধের বাজার তৈরি হোক- এটা আমরা চাই না। রাতারাতি আমাদের বিদেশি এজেন্ট বানানো যাবে না।’
কোম্পানিগুলোকে ব্যবস্থাপনার দিকে একটু মনোযোগ দিতে হবে। কারখানাগুলোয় মান নিয়ন্ত্রণে এবং পাস্তুরিত দুধ প্যাকেটজাত করতে আরও সতর্ক থাকলেই এই সমস্যা হবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ করলেই হবে।’ বুধবার এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন অধ্যাপক ফারুক। দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সারাবাংলা, প্রথম আলো অনলাইন
‘ঢাবি অধ্যাপকের পাস্তুরিত দুধ নিয়ে গবেষণা : জনস্বার্থে করণীয়’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), ডবি�উবিবি ট্রাস্ট, জনউদ্যোগ, বিসিএইচআরডি, সুবন্ধন, ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ, এএসবিডি ও গ্রিনফোর্স।
বুধবার পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) নেতৃত্বে অধ্যাপক আ ব ম ফারুক সঙ্গে একাত্মতা জানায় বেশকিছু সংগঠন। এ সময় সংগঠনগুলোর হয়ে অধ্যাপক ফারুকের পক্ষে লিখিত বিবৃতি উপস্থাপন করেন পবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. লেলিন চৌধুরী।
এর আগে, দুধের এই গবেষণা নিয়ে ৯ জুলাই প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এক আলোচনায় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, ‘পিআর রিভিউ জার্নালে প্রকাশ হওয়ার আগেই গবেষক সাংবাদিকদের ফলাফল জানিয়েছেন। তার গবেষণায় ত্রুটি ছিলো, স্যাম্পল সঠিক ছিলো না। তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে জবাব না এলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ঢাবি অধ্যাপকের পাশে আছেন জানিয়ে ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘গবেষণার ফল প্রকাশ করায় একজন আমলা অধ্যাপক ফারুককে হুমকি দিয়েছেন, জেল খাটানোর ভয় দেখিয়েছেন। আমরা কোন দেশে বাস করি? একজন আমলা কিভাবে একজন শিক্ষককে হুমকি দেয়ার সাহস পায়! আমলার কাছ থেকে কি গবেষণা শিখতে হবে? সাংবাদিকরা কিভাবে সংবাদ লিখবেন, চিকিৎসকরা কিভাবে চিকিৎসা করবে সেটি কি ওই আমলা শিখিয়ে দেবেন? আমরা অধ্যাপক ফারুকের পাশে আছি।’
পাস্তুরিত দুধ নিয়ে গবেষণা করা অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেছেন, ‘আমরা কোনো ব্র্যান্ড বা কোম্পানির বিরুদ্ধে নই। আমরা চাই দেশীয় দুগ্ধশিল্প বিকশিত হোক। বিদেশি দুধের বাজার তৈরি হোক এটা আমরা চাই না। রাতারাতি আমাদের বিদেশি এজেন্ট বানানো যাবে না।’
অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, ‘আমাদের দোষারোপের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। সরকারি কর্মকর্তারা ভোক্তাদের পক্ষে কথা না বলে মারমুখী হয়ে আছেন। কোম্পানির পক্ষের কথা কেন সরকারি কর্মকর্তারা বলবেন। ভোক্তার প্রত্যাশা ও কোম্পানির স্বার্থের মধ্যে সমন্বয় করে কথা বলেন। রাগারাগি করে এই সমস্যার সমাধান হবে না।’
আ ব ম ফারুক আরও বলেন, ‘পিআর রিভিউতে মৌলিক গবেষণা দিতে হয়। আমি যেটা করেছি, সেটা দুধে পানি ছিলো কি না, তা বের করার গবেষণা। সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছে দুধে অ্যান্টিবায়োটিক আছে। পিআর জার্নালে গবেষণা প্রকাশ হতে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগে। সেই জার্নালে প্রকাশের পর যদি আমি এই ফলাফল প্রকাশ করতাম, তাহলে জনগণ কি আমাকে ক্ষমা করতো? পৃথিবীর কোনো দেশে জনস্বাস্থ্যবিষয়ক ইস্যুগুলো পিআর জার্নালের মাধ্যমে আসতে হয় না।’
ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সভাপতি অধ্যাপক এম আবু সাইদ বলেন, দুধে যে হরমোন বা অ্যান্টিবায়োটিক এলো, এটা গাভির মধ্যে কি না বা কোন পর্যায় থেকে আসছে, এটাও গবেষণা করে বের করতে হবে। একজন সচিব একজন বিজ্ঞানী ও শিক্ষককে বিষোদগার করার এই স্পর্ধা কী করে পান এ প্রশ্ন সবার কাছে। এর মূল কোত্থেকে এলো, এগুলোও বিবেচনায় আসা উচিত।
সভাপতির বক্তব্যে পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, ‘দুধের নামে কি আমরা দুধ খাচ্ছি, নাকি অন্য কিছু খাচ্ছি? খাদ্য নিয়ে আমরা প্রায় সবাই উদ্বিগ্ন। ২০০৫ সাল থেকে আমরা নিরাপদ ও বিষমুক্ত খাদ্যের দাবিতে আন্দোলন করছি। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো আমাদের উদ্বিগ্ন করছে।’