বিশ্বে মাছ উৎপাদনে শীর্ষ অবস্থানে যাচ্ছে বাংলাদেশ
মো. আখতারুজ্জামান : মৎস্য উৎপাদনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে বাংলাদেশে। আগামী ২০২২ সালে মাধ্যে বিশ্বে যে কয়েকটি দেশে মাছ চাষে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করতে যাচ্ছে তার মধ্যে প্রথম অবস্থানে থাকবে বাংলাদেশ। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আইএফপিআরআই) এক সমীক্ষায় এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশে উৎপাদিত মাছের ৭৫ শতাংশই এখন বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করছেন মাছ চাষিরা। মাছের উৎপাদনে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে ইলিশে প্রথম, মুক্ত জলাশয়ের আহরণে তৃতীয়, তেলাপিয়ায় চতুর্থ এবং বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছে ৫ম স্থানের অধিকারী।
মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রমজান আলী বলেন, মৎস্য চাষে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে চীন। তারা যে সুযোগ সুবিধাগুলো পাচ্ছে আমরা সেটা পাচ্ছি না। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আগের তুলনায় এখন আমাদের মাছ উৎপাদন বেড়ছে। আর এ খাত এখন অনেক লাভজনক। যার ফলে সাধারণ চাষিরা থেকে শুরু করে দেশের বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো এ খাতে বিনিয়োগ করছে। এখন বিশ্ব বাজারে আমাদের প্রতিনিয়ত মাছ রপ্তানি বাড়ছে।
সমীক্ষায় আরো বলা হয়েছে, বাড়তি চাহিদা, প্রযুক্তির উন্নয়ন, যোগাযোগ অবকাঠামো, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন দ্রুত বাড়ছে। বাংলাদেশ সরকার ভিশন ২০২১-এ দেশের মাছের উৎপাদন ৪৫ লাখ টন নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বর্তমান উৎপাদনের চেয়ে ১০ লাখ টন বেশি। মিঠা পানির মাছ উৎপাদনের বিপুল সম্ভাবনার পাশাপাশি সামুদ্রিক মাছ আহরণের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। সমুদ্রে মাছ আহরণের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ২৫তম। বঙ্গোপসাগরে ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি ছাড়াও প্রায় ৫০০ প্রজাতির অর্থকরি মাছ রয়েছে। প্রতিবছর অব্যবস্থাপনা ও অবহেলায় উৎপাদিত মাছের একটা বড় অংশ, প্রায় ১০ লাখ টন নষ্ট বা অপচয় হয়ে যায়। এটা রোধ করতে পারলে মাছ উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব হবে।
জানা যায়, দেশে প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৬০ শতাংশ জোগান আসে মাছ থেকে। মাছ উৎপাদনে ২০১৫ ও ২০১৭ সালে বিশ্বে পঞ্চম থেকে চতুর্থ স্থান অর্জন করে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ তৃতীয়। বাংলাদেশের আগের দু’টি অবস্থানে রয়েছে চীন ও ভারত। দেশে মোট কৃষিজ আয়ের ২৩ দশমিক ৮১ শতাংশ আসে মৎস্য খাত থেকে। জিডিপিতে মৎস্য খাতের অবদান এখন তিন দশমিক ৫৭ শতাংশ। কৃষিজ জিডিপিতে এ খাতের অবদান ২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ১১ শতাংশের বেশি ১ দশমিক ৮২ কোটি মানুষ মৎস্য আহরণে সম্পৃক্ত। যার মধ্যে প্রায় ১৫ দশমিক ৫ লাখ নারী। অর্থনৈতিক উন্নয়নে মৎস্য সেক্টরের অবদান অসামান্য। উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় দেশের মানুষ গড়ে ৬২ দশমিক ৫৮ গ্রাম মৎস্য গ্রহণ করছেন। জাটকা নিধন ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ায় ২০১৭-১৮ সালে প্রায় পাঁচ লাখ টন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে। ২০১৭-১৮ সালে প্রায় ৬৯ হাজার টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান