ঈদের ছুটিতে ডেঙ্গু আরও ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের
ফাতেমা আহমেদ : চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে গেছেন ১৭ হাজার ৩৩৮ জন। বাসস, বিডিনিউজ
বর্তমানে সারাদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে এ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছেন ৭ হাজার ৩৯৮ জন রোগী। ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৮ জন। এপর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৪ হাজার ৮০৪ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ৬৫০ জন, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ৪০৩ জন এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ৮১৭ জনসহ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি মোট রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৪২৯ জন।
এই মৌসুমে রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৮৭০ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে। এর আগে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ রোগী ভর্তির সংখ্যা ছিলো গত ১ অগাস্ট, সেদিন ভর্তি হয়েছিলেন ১৭১২ জন। তারপর দুদিন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমলেও রোববার আবার বেড়ে গেছে।
এই ১৮৭০ জনের মধ্যে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে এক হাজার ৫৩ জন এবং দেশের আট বিভাগে ৮১৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এর আগের ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৬৪৯ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তার মধ্যে রাজধানীতে ভর্তি হয়েছিলেন ৯৬৯ জন এবং বাকি জেলাগুলোতে ৬৮০ জন।
তার আগে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত রাজধানীতে ৯৯৬ জনসহ পুরো দেশে এক হাজার ৬৮৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে।
সরকারি হিসাবে, পুরো জুলাই মাসে সারাদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ১৫ হাজার ৬৫০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। আর, চলতি অগাস্ট মাসের প্রথম ৭২ ঘণ্টাতেই ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬ হাজার ৯৬৭ জন।
রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১৮ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অর্ধ শতাধিক মৃত্যুর খবর ইতোমধ্যে এসেছে।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সকালে মারা গেছেন পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক শাহাবুদ্দীন কোরেশীর স্ত্রী ৫৪ বছর বয়সী সৈয়দা আক্তার।
সারাদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে এখনও ৭ হাজার ৩৯৮ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে রাজধানীর ৩৭টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৪ হাজার ৯৬৯ জন ভর্তি আছেন।
রাজধানীর বাইরে ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোতেই সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এসব জেলার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ২১৬ জন, তাদের নিয়ে মোট চিকিৎসাধীন ৪৪৩ জন।
চট্টগ্রাম বিভাগে নতুন ডেঙ্গু রোগী ১৫৯ ও চিকিৎসাধীন ৪১৬ জন, খুলনা বিভাগে নতুন ১২৭ ও চিকিৎসাধীন ৪২১ জন, রাজশাহী বিভাগে নতুন রোগী ৮৩ জন ও চিকিৎসাধীন ৩৪২, বরিশাল বিভাগে নতুন ৭৮ জন ও চিকিৎসাধীন ২২৯ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে নতুন ৭০ জন ও চিকিৎসাধীন ২৬৮ জন, রংপুর বিভাগে নতুন ৫৩ জন ও ভর্তি ২১৫ জন এবং সিলেট বিভাগে নতুন শনাক্ত ৩১ জন ও হাসপাতালে ভর্তি ৯৯ জন।
ঈদের ছুটির সময় ডেঙ্গু আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় লোকজনের সম্ভাব্য আনাগোনা বেড়ে যাওয়ার কারণে এই ঝুঁকির কথা বলছেন চিকিৎসকেরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ গত ২৭ জুলাই ঢাকায় তার দপ্তরে জ্বর নিয়ে কাউকে ঢাকা না ছাড়ার পরামর্শ দেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীকে মশারির মধ্যে রাখতে হবে। কারণ, ডেঙ্গু রোগীকে কোনো এডিস মশা যদি কামড় দিয়ে পুনরায় অন্য কাউকে কামড় দেয় তাহলে তারও ডেঙ্গু হবে। ঢাকায় আসাযাওয়া ছাড়াও স্থানীয়ভাবেও কিছু কিছু ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তি পাওয়া যাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
চিকিৎসকেরা বলছেন, চট্টগ্রামে যেসব ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে তার মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ ঢাকায় আসাযাওয়ার কারণে আক্রান্ত। স্থানীয়ভাবে এডিস মশার কামড়েও ডেঙ্গু হচ্ছে। চিকিৎসকেরা জানান, ডেঙ্গু সারা বছরের রোগ। কিন্তু বর্ষাকালে এডিস মশার উপদ্রব বাড়ার কারণে এর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মো. আবদুর রব ঈদের সময় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি বলে মনে করছেন। এ সময় ডেঙ্গু নিয়ে জেলা থেকে উপজেলায় গেলেও এই রোগ ছড়ানোর শঙ্কা বেশি থাকবে বলে মনে করেন তিনি।
সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক অসীম কুমার নাথ। তিনি বলেন, ‘জ্বর হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া দরকার। সব জ্বর ডেঙ্গু নয়। তারপরও ডেঙ্গু নিশ্চিত হওয়ার পর এক জায়গায় থাকা উচিত। এতে এর বিস্তার ঠেকানো সম্ভব।
জেলা সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে ঈদে জ্বর নিয়ে কাউকে বাড়ি ঘরে যেতে নিষেধ করেছেন। এটি মানা হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে।