সুন্দরবনে বিষ প্রয়োগে চলছে মাছ শিকার
ইয়াছির আরাফাত : সুন্দরবনে প্রজননের ভরা মৌসুমেও নিষেধজ্ঞা অমান্য করে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করছে এক শ্রেণির জেলেরা। ডিম পাড়ার সময় বলে জুলাই ও আগস্ট মাসে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে বন বিভাগ। কিন্তু নিষেধ অমান্য জেলে নামধারী মৎস্য দস্যুরা বনে ঢুকে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করছে। যা মানুষের জীবন ও পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এ অবস্থা থেকে সুন্দরবনকে রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান। বাংলাট্রিবিউন
তিনি বলেন, সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকারের প্রবণতা শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে কঠোর অভিযানে নেমেছে বনবিভাগ। দুর্বৃত্তদের আটক করা হচ্ছে। আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. শাহীন কবির জানান, ‘নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই গত ২৩ জুলাই সকালে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সূর্যমুখি খাল থেকে বিষ ও বিষমিশ্রিত মাছসহ দুই জনকে আটক করেছে বনরক্ষীরা। এর আগেও ১৫ ও ১৬ জুলাই পুলিশ এবং বনবিভাগ পৃথক অভিযান চালিয়ে বিষ দিয়ে মাছ শিকারের সময় চারজনকে আটক করা হয়।’
মোংলা উপজেলা সরকারি হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক বলেন, ‘এই বিষাক্ত পানির মাছ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। বিষাক্ত পানির মাছ খেলে মানুষের পেটের পীড়াসহ কিডনি ও লিভারে জটিলতা দেখা দেয়।’ তিনি বিষ মিশ্রিত মাছ না খাওয়ার জন্য জনসাধারণকে পরামর্শ দেন।
সুন্দরবন সংগলগ্ন বাসিন্দা ওলিয়ার রহমান, লিয়াকত আলী ও আব্দুল গফফার জানান, সুন্দরবনের ঢাংমারী, জয়মনি, জোংড়া, মরাপশুর, ঝাপসি, ভদ্রাসহ আশপাশের এলাকার খালে কিছু জেলে বিষ দিয়ে মাছ ধরছে। এই বিষাক্ত পানি খাল থেকে ভাটার সময় নদীতে নেমে আসে। এ কারণে মাছ মরে যায়। নদীতে এখন আর ছোট-বড় মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরার কারণে জীব বৈচিত্র্যসহ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হলেও তা থেমে নেই।
বিষ দিয়ে মাছ ধরার ব্যাপারে কিছু জানেন না উল্লেখ করে মোংলা বাজারের ব্যবসায়ী (জনতা এন্টারপ্রাইজের) মালিক মো. সেলিম জানান, কীটনাশক ডায়মগ্রো, ফাইটার, রিপকর্ড ও পেসিকল তো কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্য কিনেন চাষিরা কিনেন। এগুলো দিয়ে সুন্দরবনের খালে মাছ মারা হয় কিনা তা জানা নেই। কৃষি বিভাগ অনুমোদন দেয়ার পরই তারা এসব কীটনাশক বিক্রি করেন।
জানা যায়, সুন্দরবনের ৩১ দশমিক ১৫ ভাগ এলাকা জুড়ে রয়েছে বিশাল জলভাগ। এখানকার অসংখ্য খালে প্রায় তিনশ’ প্রজাতির মাছ আছে। সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের চারটি রেঞ্জের আওতাধীন ১৮টি খালে সব ধরনের মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কারণ ১৮টি খালেই এসময় মা মাছ থাকে। কিন্তু বেশি লাভের আশায় মৎস্য দস্যুরা (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) এই সময়ই খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরে। মোংলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এ জেড এম তৌহিদুর রহমান জানান, সুন্দরবনের খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার বন্ধে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি এর ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। বিষ দিয়ে মাছ শিকার বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ স্থানীয় জনগণকে আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান