রাস্তায় নষ্ট হচ্ছে কাঁচা চামড়া, তবুও বেঁচবেন না ব্যবসায়ীরা
স্বপ্না চক্রবর্তী : কোরবানীর পশুর চামড়া নিয়ে তৃপক্ষীয় দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। এর ফলে এখনও রাস্তাঘাটেই স্তুপাকারে জমা হয়ে আছে কাঁচা চামড়া। রাজধানীসহ সারাদেশে রাস্তায় পরে থাকা এসব চামড়া কুকুরসহ বিভিন্ন কীট-পতঙ্গের খাদ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্যানারি মালিকরা আজ থেকে চামড়া কিনতে চাইলেও কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা মূল্য পরিশোধের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত বিক্রি বন্ধ রাখতে বদ্ধ পরিকর। এমতাবস্থায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ইতিমধ্যে আমরা প্রজ্ঞাপন জারি করে দিয়েছি ট্যানারি মালিকরা কাঁচা চামড়া না কিনলে তা নষ্ট করার চাইতে রপ্তানী করা হবে।
শুক্রবার বাণিজ্যমন্ত্রী এ প্রতিবেদককে বলেন, ট্যানারি মালিকরা ঈদের আগে আমাদের সাথে বৈঠক করেছেন। ওইসময় সবার সম্মতি সাপেক্ষে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও ঈদের পর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। কাঁচা চামড়ার দাম একেবারে তলানিতে নেমে আসে। তৃণমূলে চামড়ার দাম একেবারেই পাওয়া যায়নি। তাই এগুলো অপচয় হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে আমরা তা রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে ট্যানারি মালিকরা চামড়া কিনতে রাজি হলেও এখন যেহেতু কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা তা বিক্রি করবে না সেহেতু রপ্তানির বিকল্প তো দেখছি না। তবুও শনিবার তারা যখন বলেছে বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে তখন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। আমি দেশের বাইরে থাকবো তাই সচিবের সাথে আলোচনা সাপেক্ষেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত আসবে বলে আমি মনে করি।
তবে কাঁচা চামড়া যদি ট্যানারি মালিকরা না কিনে তাহলে সাভারে নব-নির্মিত চামড়া শিল্পনগরী পুরোপুরি অচল হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন শিল্প সচিব মো. আব্দুল হালিম। তিনি বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ট্যানারি মালিকরা যদিও চামড়া কিছু কিছু কেনা শুরু করেছে তবুও আমি মনে করি তা পর্যাপ্ত না। বাংলাদেশে কাঁচা চামড়ার প্রধান উৎস কোরবানি ঈদ। এই ঈদে কোরবানী দেওয়া পশুর চামড়া যদি ট্যানারি মালিকরা এখন সরবরাহ না করে তাহলে ট্যানারি শিল্পের ভবিষ্যত অন্ধকার। তাই আমি সবাইকে আহ্বান জানাবো এ শিল্পকে রক্ষা করতে হলে এখনি কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী এবং ট্যানারি মালিকদের একজোট হতে। যাতে করে এ শিল্পটি রক্ষা পায়।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাহীন আহমেদ বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আহ্বানের প্রেক্ষিতে আমরা চামড়া কেনা শুরু করেছি। শনিবার থেকে পুরোদমে কিনতে চাই। কিন্তু কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা আবারও সিন্ডিকেট করে চামড়া বিক্রি বন্ধ রাখার কথা বলছে। যদি এমনটিই হয় তাহলে আমাদের আর কি করার আছে?
কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, সিন্ডিকেট বলতে তারা ট্যানারি মালিকরা কি বুঝাতে চেয়েছে এর ব্যাখ্যা না পাওয়া পর্যন্ত আমরা চামড়া বিক্রি করবো না। এমনিতেই তাদের কাছে আমাদের গত ২/৩ বছরের চামড়ার দাম পাওনা রয়ে গেছে। এ বছর আবার কাঁচা চামড়া না কেনার পায়তারা করছে তারা। তাই বিষয়টির একটি সুষ্ঠু সমাধানে না আমরা তাদের কাছে কাঁচা চামড়া বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামীকাল বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।