মোজাফফর আহমদকে ফুলেল শ্রদ্ধায় শেষ বিদায়
রফিক আহমেদ : মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- ন্যাপ-এর সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ’র প্রথম জানাজা সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়, দ্বিতীয় জানাজা দলের ধানমন্ডি কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও তৃতীয় জানাজা বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ’র লাশ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেয়া হয়। প্রথম জানাজা সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় গতকাল শনিবার বেলা সোয়া ১১টায় অনুষ্ঠিত হয়। এতে সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন।
জানাজা শেষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে তার সহকারী সামরিক সচিব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী মরদেহের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা শ্রদ্ধা জানান। পরে দলের জ্যেষ্ঠ নেতা-কর্মীদের নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা পৃথক আরেকটি পুষ্পাঞ্জলী তাঁর কফিনে অর্পণ করেন।
জানাজায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান ও জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার উপস্থিত ছিলেন। সেখানে মরহুমের জীবনী পাঠ করেন ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন।জানাজা পরিচালনা করেন সংসদ ভবন মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মো. সাইফুল্লাহ। জানাজা শেষে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মোজাফফর আহমদকে গার্ড অব অনার ও রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করা হয় ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
আওয়ামী লীগের পক্ষে দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে সভাপতি শেখ হাসিনা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এবং জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ড.আব্দুস সোবহান গোলাপসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বাংলাদেশকে নেতৃত্ব প্রদানকারী মুজিনগর সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। তিনি দেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুকে সহযোগিতা করেছেন। তাঁর জেনারেশনের আর কেউ বেঁচে নেই এবং রাজনীতিতেও থাকছেন না। তাঁর ত্যাগের দৃষ্টান্ত সবাই সারাজীবন অনুসরণ করবে।
প্রায় ৫ দশকের অধিক সময় ধরে ন্যাপ সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ গতকাল শুক্রবার রাত ৭টা ৪৯ মিনিটে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ’র দ্বিতীয় জানাজা সকাল সাড়ে ১১টায় ধানমন্ডি দলের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে সেখানে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা তাঁকে শ্রদ্ধা জানান।
তারপর দুপুর ১২টায় সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ’র লাশ নেয়া হয়। সেখানে শ্রদ্ধা জানান বিকল্পধারা বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান বি. চৌধুরীর পক্ষে দলের সহ সভাপতি এনায়েত কবির, বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য, বাম ঐক্যের ডা. বিকল্প ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক মোহাম্দ শাহ আলম, কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, কাফি রতন, এম এ আকাশ, বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ, রাজেকুজ্জামান রতন, ডা. এম এ সামাদ ও এনপিপির
স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে বাংলাদেশের দেশের কমিউনিস্ট পার্টি- সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অনন্য আবদান রয়েছে। তিনি শৈশবকাল থেকে সমাজতন্ত্রের জন্য লড়াই করে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ন্যাপকে সংগঠিত করেছেন। আজ মোজাফফর আহমদ আমাদের মাঝে নেই। তিনি প্রতিদিন আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ নীতি ও আদর্শবান ব্যক্তি ছিলেন। তিনি মূলত বাংলাদেশের রাজনীতিতে আত্মগোপন জীবন যাপন করেছেন। তিনি আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের স্বীকৃতির ব্যাপারে বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তাঁর স্মৃতি ও আদর্শ আমাদের সম্পদ।
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- ন্যাপ সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ’র লাশ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাদ আসর বায়তুল মোকাররম মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জানাজা শেষে কুমিল্লা টাউন হলে নেয়ার পর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তারপর দেবিদ্বারের এলাহাবাদ নিজ গ্রামে সর্বশেষ জানাজা শেষে তাকে দাফনের কথা রয়েছে। সম্পাদনা : সমর চক্রবর্তী