জিপি-রবি বনাম বিটিআরসি দ্বন্দ্বে শেষ অব্দি বিশেষ প্রশাসক
মেরাজ মেভিজ : অর্থমন্ত্রীর মধ্যস্থতায় বিশেষ বৈঠকের পরও সমাধান হচ্ছে না গ্রামীণফোন (জিপি) ও রবি আজিয়াটা লিমিটেডের (রবি) সঙ্গে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) চলমান দ্বন্দ্ব। কারণ দর্শানোর নোটিসের বিপরীতে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দেয়া জিপি ও রবির উত্তরের পর এবার সমস্যা সমাধানে একজন বিশেষ প্রশাসক নিয়োগের কথা ভাবছে বিটিআরসি।
নিরীক্ষা আপত্তির ‘পাওনা’ টাকা আদায় করতে না পেরে লাইসেন্স বাতিল সম্পর্কিত কারণ দর্শানোর নোটিসের প্রত্যুত্তরে জিপি-রবির জবাবের পর, এ সংক্রান্ত পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে; একজন বিশেষ প্রশাসক নিয়োগের প্রসঙ্গ উঠে আসে গণমাধ্যমের সঙ্গে বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হকের কথপোকথনে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান জানান, সমস্যা সমাধানে সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে একজন প্রশাসক নিয়োগ একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। তবে আমরা মাত্রই তাদের (জিপি-রবি) উত্তর পেয়েছি এখন আমরা সময় নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো।
এদিকে পাঠানো উত্তরে, গত ৫ সেপ্টেম্বর বিটিআরসির লিগ্যাল নোটিসকেই ভিত্তিহীন বলে দাবি করছে দেশের টেলিকমিউনিকেশন খাতের শীর্ষ দুই প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া দ্বন্দ্ব আদালতের দিকে গড়ালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের মধ্যস্থতায় ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার, বিটিআরসির চেয়ারম্যান জহুরুল হক ও গ্রামীণফোনের সিইও মাইকেল ফোলির সঙ্গে দুই দফায় বৈঠকের পরও বিটিআরসি তাদের কারন দর্শানোর নোটিসটি তখনও প্রত্যাহার না করায় রবি ও জিপির এই উত্তর দেয়াটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বলেই জানিয়েছেন আইনজ্ঞরা।
গত বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) জিপির পাঠানো ওই চিঠির পর বিটিআরসি থেকে গতকাল (৮ অক্টোবর) পর্যন্ত কোনো জবাব আসেনি বলে নিশ্চিত করেছেন গ্রামীণফোনোর হেড অব রেগুলেটরি ও অ্যাক্টিং হেড অব কমিউনিকেশন হোসেন সাদাত। এ প্রতিবেদককে মুঠোফোন বার্তায় তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের অমীমাংসিত এবং ভিত্তিহীন অডিট দাবির জটিলতা নিরসন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করার জন্য আমরা অর্থমন্ত্রী, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আমাদের লাইসেন্স বাতিল সংক্রান্ত বিটিআরসির ভিত্তিহীন শোকজ নোটিসটি যেহেতু তুলে নেয়া হয়নি, সেহেতু আমরা আমাদের প্রত্যুত্তর দাখিল করেছি।
একই প্রসঙ্গে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলমের ভাষ্য, বিতর্কিত নিরীক্ষা আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসি আমাদের কাছে যে লিগ্যাল নোটিস পাঠিয়েছে, তার আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। কারণ এ লিগ্যাল নোটিস জারির আগেই আদালতে এ বিষয়ে একটি মামলা বিচারাধীন আছে। আর বিচারাধীন কোনো বিষযের ওপর কোনো মন্তব্য আমাদের পক্ষে করা সম্ভব নয়।
প্রসঙ্গ, গ্রামীণফোনের কাছে নিরীক্ষা আপত্তি দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বলে দাবি করে আসছে বিটিআরসি। কয়েক দফা চেষ্টায় সেই টাকা আদায় করতে না পেরে লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর নোটিস পাঠানো হয় দুই অপারেটরকে। নোটিসে ৩০ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছিল। বিটিআরসির দাবি করা টাকার ওই অঙ্ক নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছিল গ্রামীণফোন ও রবি। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান