ভারতে ১ লাখ কোটি ডলারের ব্যক্তি পর্যায়ে সোনা মজুদের সুবিধা নিয়ে জমজমাট অ্যাপভিত্তিক বন্ধকী ঋণ ব্যবসা
নূর মাজিদ : ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াতে চান একটি বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ভারতীয় নাগরিক বিজয় মাথুর। সেই খরচের হিসেবে ঘাটতি ছিলো প্রায় দুই লাখ ভারতীয় রুপি। সঞ্চিত স¤পদের মাঝে ছিলো স্ত্রীকে উপহার দেয়া কিছু সোনার অলংকার। সেটাই বন্ধক রেখে ঋণ পেতে চান তিনি। তবে এইজন্য তিনি কোন জুয়েলারি বা সুদ ব্যবসায়ীর দ্বারস্থ হননি। বরং এর পরিবর্তে ব্যবহার করেন একটি মোবাইল অ্যাপ। এরপরের গল্প খুবই সহজ। একঘণ্টার মাধ্যেই রূপেক ফিনটেক প্রাইভেট লিমিটেড নামক অনলাইন সোনা বন্ধকী ঋণ কো¤পানির এজেন্ট চলে আসেন তার মুম্বাইয়ের বাড়িতে। সেখানে তার পরিবারের সকল সদস্যের উপস্থিতিতেই একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ক¤িপউটার স্ক্যানার দিয়ে অলংকারের ব্যবহার করা সোনার মান যাচাই করেন ওই এজেন্ট। ওই তথ্য চলে যায় কো¤পানির সার্ভারে। সেখান থেকে নিশ্চিত করা হয় শ্রী মাথুর এসব অলংকারের বিপরীতে ২ লাখ রুপি ঋণ পেতে পারেন। নির্ধারণ করা হয় ঋণে সুদের হার এবং পরিশোধের সময়।
এখানে শুধু বন্ধকী ঋণের বিষয়টি জড়িত নয়। ছিলো পারিবারিক মর্যাদারও বিষয়। সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কারণেই ভারতের নাগরিকরা পারিবারিকভাবে সোনা সঞ্চয় করে থাকেন। কিন্তু, এই স¤পদের বন্ধকীতে প্রচলিত উৎসগুলো ঠিক বিশ্বাসযোগ্য উপায়ে ব্যবসা করেনা। পাশাপাশি বন্ধক রাখতে গিয়ে জানাজানি হওয়ার সম্ভাবনায় সামাজিকভাবেও বিব্রত হতে পারতেন শ্রী মাথুর। এসব ঝামেলা থেকে তাকে সহজেই মুক্তি দিয়েছে রূপেক ফিনটেক। এজেন্টের উপস্থিতিতেই তার ব্যাংক একাউন্টে ট্রান্সফার করা হয় ঋণের অর্থ। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরেই গহনা সমেত মোটর সাইকেলে করে ফেডারেল ব্যাংক নামক রুপেকের বাণিজ্যিক অংশীদার একটি ব্যাংকের উদ্দেশে রওনা দেন ওই এজেন্ট। এসময় কো¤পানির সার্ভার থেকে সার্বক্ষণিকভাবে তার অবস্থান নিশ্চিত করা হয়। এজেন্টের মাধ্যমে ব্যাংকে অলংকারগুলো ঠিকঠাক জমা পড়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়, এভাবেই। অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত এই লেনদেন ইতোমধ্যেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে ভারতে। পাশাপাশি দেখাচ্ছে অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনা উন্মোচনের ক্ষেত্র।
অংশীদার ব্যাংকের গ্যারান্টি, সহজ কিস্তিতে ঋণ পরিশোধের সুযোগ এবং প্রদত্ত ঋণে সাড়ে ১০ দশমিক ৬ থেকে ২০ শতাংশ সুদের বিষয়টিও মানুষের কাছে বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। এমনকি এখন বন্ধকীতে আগ্রহী ভোক্তাচাহিদা সামাল দিতেই হিমশিম খাচ্ছে রূপেক। সিলিকন ভ্যালির সিকিওইয়া ক্যাপিটাল এবং এক্সেল এর মতো ফাইন্যান্সিয়াল টেক কো¤পানির সহযোগিতায় ইতিমধ্যেই তাদের ব্যবসা বার্ষিক দেড় কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।
তবে এখনও প্রচুর সম্ভাবনা রয়েই গেছে। এই বিষয়ে মানিয়ার বলেন, বর্তমানে বিশ্বে সোনার দর ১৮ শতাংশ বেড়েছে। আর ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের অতি সা¤প্রতিক হিসেবেই ভারতে ব্যক্তি ও বেসরকারি পর্যায়ে আছে ২৫ হাজার টন মূল্যবান ধাতুটির সঞ্চয়। যার বর্তমান বাজারমূল্য এখন ১ লাখ কোটি মার্কিন ডলার বা দেশটির স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৭০ লাখ কোটি রুপি। এটা মার্কিন সরকারের সবচেয়ে বড় সোনার মজুদ ফোর্টনক্সের মজুদের চাইতে কয়েকগুণ বেশি। ২০২৫ সাল নাগাদ ৫ লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতি হওয়ার ভারত সরকারের লক্ষ্যপূরণেও মহাশক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে অ্যাপভিত্তিক বন্ধকী ঋণের এই ব্যবসা।
গ্রাহকদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ হলো ব্যাংকের বাড়তি চার্জ ঋণগ্রহীতা বহন করেন না। এমন শর্তের ভিত্তিতেই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে অংশীদারির চুক্তি করে রূপেক। আর এতে প্রচলিত শিল্প ও ব্যবসায় অনাদায়ী ঋণের ভারে জর্জরিত ব্যাংকিংখাত বেশ আগ্রহ নিয়েই এগিয়ে আসছে। তারল্য সংকটে থাকা বেসরকারি খাতের অর্থনীতি এখন এই ঋণের হাত ধরে নতুন প্রাণশক্তি ফিরে পেতে পারে। সম্পাদনা : মোহাম্মদ রকিব