ভারতে ৬ মাসে ৯৬ হাজার কোটি রুপি জালিয়াতির অভিযোগ সরকারি ব্যাংকগুলোর
নূর মাজিদ : ভারতের সরকারি ব্যাংকিংখাতে খেলাপি ঋণের সংকট ইতোমধ্যেই দেশটির অন্যতম প্রধান জাতীয় আলোচনায় রূপ নিয়েছে। পরিস্থিতির উন্নয়নে পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর নরেন্দ্র মোদীর সরকারও মনোযোগ দিয়েছে সরকারি ব্যাংকের সংস্কার ও পুনঃতফসিলিকরণে। নতুন তহবিল হিসেবে বরাদ্দ করা হয় যথেষ্ট অর্থও। তবে এসব কিছুই সরকারি মালিকানায় আর্থিকখাতের সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। খেলাপি ঋণের পাশাপাশি অব্যাহত জালিয়াতিও যার প্রধান কারণ। এই প্রবণতার ধাক্কায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) ৯৫ হাজার ৮শ কোটি রুপির ক্ষতি হয়েছে। অনিয়মের এসব কথা নাগরিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে পরিচালিত সরকারি ব্যাংকগুলোর অভিযোগের ভিত্তিতেই জানা যায়।
গত মঙ্গলবার এই চিত্র স্বীকার করেছেন খোদ দেশটির কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। তিনি জানান, সরকার যখন এসব প্রতিষ্ঠানের তহবিল বৃদ্ধির আপ্রাণ চেষ্টা করছে, ঠিক তার মাঝেই জালিয়াতি করে সরকারি অর্থ হাতিয়ে নেয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। খবর : ইকোনমিক টাইমস। ভারতের অর্থবছর শুরু হয়ে পহেলা এপ্রিল থেকে। সেই হিসেবে চলতি অর্থবছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ মোট ৫ হাজার ৭৪৩টি ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ অর্থ মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়েছে (সরকারি) নাগরিক পরিসেবা ব্যাংক বা পিএসবিগুলো। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেশ কয়েক বছর আগের পুরোনো জালিয়াতি এই প্রথম খুঁজে বের করে অভিযোগপত্রে যুক্ত করা হয়। আলোচিত সময়ে নতুন ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ১ হাজার। এই বাবদ মাত্র আড়াই হাজার কোটি জনগণের অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলেও দাবী করেন ভারতের অর্থমন্ত্রী। পূর্ববর্তী মেয়াদে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা এই ঝানু রাজনীতিবিদ খুব কৌশলী সুরেই বলেন, ‘ব্যাংকিংখাতে ধোঁকাবাজির মাধ্যমে ভুয়া ঋণ ইস্যু বন্ধে সব ধরণের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।’ তবে এই আশ্বাস বাস্তবতার আখেরে তোতাপাখির পুরোনো বুলির মতোই প্রতিধ্বনি তোলে দেশটির অনেক ঝানু আর্থিকখাত বিশেষজ্ঞ সাংবাদিকের কানে। এমন বিশ্বাসের কারণ বুঝতে সাম্প্রতিক অবস্থা ও একটু পেছনের ইতিহাসে পাওয়া তথ্যের দিকেও দৃষ্টি দেয়া উচিৎ।
সীতারমন সরকারের যেসব পদক্ষেপের কথা বলেছেন তার আওতায় ইতিমধ্যেই জালিয়াতির সঙ্গে স¤পৃক্ততার কারণে ৩ লাখ ৩৮ হাজার ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট) জব্দ করা হয়েছে। তবে এটাও জেনে রাখা ভালো যেসব কো¤পানি আসলে কাগজে-কলমে ব্যবসার হিসাব দেখিয়ে ঋণ নিয়েছে বা দায়সারা ব্যবসায়িক কার্যক্রম দেখিয়েছে, বাজেয়াপ্ত করা হিসাবগুলো আসলে তাদেরই। বিগত দুই বছর ধরে এই জব্দ করার প্রক্রিয়া চলছে। এটা সরকারের আকস্মিক কোন সাফল্যের প্রমাণ নয়। দ্বিতীয়ত, নতুন আইনের আওতায় যারা ঋণ জালিয়াতি করে দেশের বাইরে পালিয়েছে তাদের দেশে থাকা সব স¤পদ জব্দ করার আইন করেছে ভারতীয় সরকার। কিন্তু, আক্ষরিক অর্থেই জালিয়াতির সিংহভাগ অর্থ হুন্ডি, চোরাচালান এবং অন্যান্য উপায়ে দেশের বাইরে চলে গেছে। তাই সাময়িক অর্জন বলে পরিস্থিতির দায় এড়ানো যে খুব একটা সহজ হবেনা একথা সীতারমনও খুব ভালো করেই জানেন। পরিস্থিতি উন্নয়নে তাই তার প্রকৃত পদক্ষেপ কি হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। সম্পাদনা : মোহাম্মদ রকিব