রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোনদিকে?
এম কবির : গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে গুপ্তহত্যার ঘটনা ঘটেছে। টার্গেট কিলিং-এ ২০ জন মারা গেছেন। নিহতের মধ্যে রয়েছেনÑ ১৪ জন মুসলমান, ৩ জন হিন্দু, ২ জন খ্রিস্টান এবং ১ জন বৌদ্ধ।
সেই গুপ্তহত্যাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ১০ জুন থেকে ১৬ জুন ৭ দিনব্যাপী জঙ্গি ও অপরাধী দমনের নামে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালিত হয়েছে। ১৩ সহস্রাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকারি তথ্যমতে, সন্দেহভাজন জঙ্গির সংখ্যা ১৯৪ জন। এ সময় ‘বন্দুকযুদ্ধ’ ২০ জন নিহত হয়েছে।
আর ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের ঘটনা নিয়ে মার্কিন সরকার (রাষ্ট্রদূত ব্লুম মার্শিয়া বার্নিকাটের মাধ্যমে), নিউইয়র্ক টাইমস, জার্মান বেতার, বিবিসি, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ মুক্তবিশ্ব এই গণগ্রেফতার ও ‘বন্দুকযুদ্ধে’র স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, তখন ভারত মনে করছে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, তারা বাংলাদেশ সরকারের এসব পদক্ষেপে খুশি এবং এই সংকটে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে থাকবেন। বার্তাসংস্থার খবরে বলা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ সরকার এবং ভারতীয় দূতাবাসের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পশ্চিম বঙ্গরাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরীও বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হিন্দু-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাসগুপ্ত এবং অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য ভারতকে হস্তক্ষেপ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ভারতেও একাধিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে নরেন্দ্র মোদির উপর হস্তক্ষেপ করার কথা বলা হয়েছে। দেশটির মিডিয়াতেও এধরনের আহ্বান এসেছে। আবার এও বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের ব্যাপারে হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই।
গত ১৯ জুন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার মি. হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা দমনে ভারত সর্বাত্মক সহায়তা দান করবে। দেশের সার্বভৌমত্ব আছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গত বুধবার রাজধানীতে ড্যাব আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এসব প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, অবৈধ সরকার দেশকে অন্যের হাতে তুলে দিতে ব্যস্ত। বর্ডারে একের পর এক হত্যা হচ্ছে, সরকার গদির লোভে কিছু বলতে পারছে না।
জঙ্গি দমনে ভারতের সাহায্য বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বাংলাদেশে জঙ্গি দমনে ভারতের সর্বাত্মক সাহায্যের প্রস্তাব করেছেন। একই প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, জঙ্গি দমনে বাইরের কোনো দেশের সাহায্যের প্রয়োজন নেই। এ সমস্যা মোকাবিলায় সরকারই যথেষ্ট।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জঙ্গি তৎপরতার মাধ্যমে কোনো মহল বাংলাদেশে কি আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরাক বা সিরিয়ার মতো ভয়াবহ এবং রক্তাক্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বাইরের কোনো দেশের প্রভাব বলয় তৈরির অপচেষ্টা পরোক্ষভাবে করে যাচ্ছে? সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ