ডিএসসিসির নগর জাদুঘর সারাদিনে দর্শনার্থী তিন-চারজন
ফয়সাল খান: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর জাদুঘরে সচরাচর দর্শনার্থীর সংখ্যা ১০ জনের বেশি হয় না। ফলে জাদুঘরের দায়িত্বে থাকা তিনজন অফিস সহকারীকে প্রায় সারাদিনই অলস সময় কাটাতে হচ্ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনের ছয় তলার পূর্ব পার্শ্বে অবস্থিত নগর জাদুঘরটি। কর্মচারীরা জানান, সারাদিনে ৩/৪ জন দর্শনার্থী আসেন। সচরাচর দর্শনার্থীর সংখ্যা ১০ জনের বেশি হয় না। জানা যায়, মূলত কোনো প্রচারণা না থাকায় দর্শনার্থী আসেন না জাদুঘরটিতে। নগর ভবনে জন্ম মৃত্যু সনদ, ট্যাক্স, লাইসেন্স করাসহ বিভিন্ন কাজের ফাঁকে ২/১ জন আসেন এই জাদুঘরে। গতকাল দুপুরে নগর জাদুঘরে গিয়ে দেখা যায়, একজন দর্শনার্থী ২ টাকা দিয়ে টিকেট ক্রয় করেন। কথা বলে জানা যায়, মেয়ের জন্ম নিবন্ধন সনদ সংক্রান্ত কাজে নগর ভবনে এসেছিলেন ধোলাইখাল এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা দুপুরের খাবারের বিরতিতে থাকায় জাদুঘর দেখতে এসেছেন তিনি। ঢাকার অনেক প্রাচীন ইতিহাস জানলেও আগে কখনোই এই জাদুঘরের কথা জানা ছিল না তার। এরপর প্রায় আরও ২ ঘণ্টা অপেক্ষা করে কোনো দর্শনার্থীর দেখা মিলেনি প্রাচীন ঢাকার ইতিহাস সমৃদ্ধ এই নগর জাদুঘরটিতে।
সরেজমিনে দেখা যায়, যাদুঘরের সামনে একটি সাইনবোর্ড ও নিচ তলায় ভবন নির্দেশিকা ছাড়া নগর ভবনের বাইরে জাদুঘরের অবস্থান সম্পর্কে নাগরিকদের জানার মত আর কোনো ব্যবস্থা নেই। অর্থাৎ নগর ভবনে প্রবেশের আগে কেউই এই জাদুঘরের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পারবেন না।
যাদুঘরের মাঝামঝি জায়গায় পানি বহনের একটি চামড়ার মসক চোখে পরে। যারা ৬০ দশকের আগে এসব মসক দিয়ে ঢাকার বাসা-বাড়ি ও হোটেলে পানি বিক্রি করত তাদেরকে বলা হত ভিস্তিওয়ালা। এমন একজন ভিস্তিওয়ালার মসকসহ ছবিও আছে জাদুঘরের দেয়ালে। রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মানচিত্রের সাথে ১৯১২-১৯১৫ সালের ঢাকার মানচিত্র। পূর্বে হাটখোলা, পশ্চিমে হাজারীবাগ, উত্তরে রমনা আর দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা। শুধু এইটুকু সীমানা নিয়ে তৎকালীন পুরো ঢাকার মানচিত্র। শত বছর আগের ঢাকার এ মানচিত্র ছাড়াও চোখে পড়ে প্রাক-মোঘল আমল থেকে বাংলাদেশ আমল পর্যন্ত ঢাকার সীমানার ধারাবাহিক বৃদ্ধির নকসা ও ১৮৮২ সালের একটি মুদ্রণযন্ত্র। ক্যাপশন থেকে জানা যায়, মুদ্রণযন্ত্রটি ঢাকার প্রথমদিকের মুদ্রণযন্ত্রগুলোর একটি। জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক এটি জাদুঘরে দান করেছেন। পুরানো ঢাকার বাইশ পঞ্চায়েত প্রধান ওসমান গণি সরর্দারের ব্যবহৃত জিনিসপত্রসহ রয়েছে নানা দুর্লভ ছবি। রায়ের বাজার, শাঁখারী বাজারসহ রাজধানীর বিভিন্নস্থানের মুক্তিযুদ্ধ চালাকালীন ছবি যে কাউকে পাকিস্তানি হানাদারদের নির্মমতার কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।
জানতে চাইলে যাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক ভোপেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী আমাদের অর্থনীতিকে জানান, নগর ভবনে যারা বিভিন্ন কাজে আসে তাদের কেউ কেউ অবসর সময় কাটাতে এখানে আসে। নগরবাসীর জন্য পরিদর্শন সহজ করার জন্য নিচ তলায় স্থানান্তরের চিন্তা-ভাবনা চলছে বলে জানান তিনি। প্রচারণার বিষয়ে জানতে চাইলে শুধু বাংলাদেশ বেতারের মহানগর নামক একটি অনুষ্ঠানের কথা ছাড়া আর কিছু জানাতে পারেননি তিনি।
১৯৮৭ সালের ২০ জুন পুরান ঢাকার পাঁচ ভাই লেনের একটি বাড়িতে জাদুঘরটি যাত্রা শুরু করে। এর প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন। অন্য উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছিলেন- ইতিহাসবিদ সিরাজুল ইসলাম, নগরবিদ নজরুল ইসলাম, স্থপতি রবিউল হুসাইন ও শিল্পী হাশেম খান। ১৯৯৬ সালের ২০ জুলাই অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনকে জাদুঘরের দায়িত্ব হস্তান্তর করে। যা বর্তমানে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনে। সম্পাদনা : রিকু আমির